Bangla Book Pdf Download (All)
হিজাব আমার পরিচয় বই
হিজাব আমার পরিচয় বই pdf download
বইঃ হিজাব আমার পরিচয়
লেখকঃজাকারিয়া মাসুদ
প্রচ্ছদঃ শরিফুল ইসলাম
পৃষ্ঠাসজ্জাঃ আব্দুল্লাহ আল মারুফ
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৯২
প্রকাশনায়ঃ সমর্পণ
মুদ্রিত মূল্যঃ ১৪২ টাকা মাত্র
বইয়ের নাম : হিজাব আমার পরিচয়
“আমি হিজাব। বিস্তৃত দিগন্তে সগৌরবে উড়তে থাকা বিজয় নিশান। আমি একটি শ্যামল কানন। সুন্দর ফুল ও সুমিষ্ট সুবাসে মুখরিত আমার বাগিচা। সুনিবিড় ছায়ায় ঢাকা আমার প্রাঙ্গণ। আমার প্রাঙ্গনে যে-ই প্রবেশ করে, তাকেই আমি ছায়াবীথিতলে স্থান করে দিই। তোমাকেও আহ্বান জানাচ্ছি। এসো, আমার সুবিশাল প্রাঙ্গনে এসো। তোমার তৃষিত আকুল আঁখিকে একটু প্রশান্ত করে নাও।”
হিজাবের মুখ থেকে এমন আহ্বান শুনে পাঠক নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়ারই কথা তবে আজ কেন হিজাব নিজেই ব্যথিত হৃদয় নিয়ে আমাদের আহ্বান জানাচ্ছে সেদিকটাও একটু ভেবে দেখার বিষয়। তাইনা? আমাদের ভাবনার জগতের টনক নাড়াতেই জনপ্রিয় লেখক জাকারিয়া মাসুদ অত্যন্ত সহজ ও সাবলীল ভাষায় তার অনবদ্য লেখনীর মাধ্যমে পাঠকের সামনে নিয়ে এসেছেন এবারের আলোচ্য বইটি। নিঃসন্দেহে এটি মেয়েদের জন্য সময়োপযোগী মহামূল্যবান একটি বই। তাহলে চলুন সমর্পণ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত চমৎকার এই বইটি সম্পর্কে কিছু কথা জেনে নিই।
বই সমাচার:
________________
“হিজাব আমার পরিচয়” বইটি লেখক জাকারিয়া মাসুদ এর চতুর্থ মৌলিক বই। আজকের নারীরা পর্দার সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক তথা হিজাব সম্পর্কে যেসব ভুল ও ভ্রান্তির মাঝে দিনাতিপাত করছে তা অতি চমৎকার ভাষাশৈলীর মাধ্যমে লেখক আলোচ্য বইয়ে তুলে ধরেছেন। পর্দার মতো একটি ফরজ বিধানকে আমরা নিজেদের খেয়াল খুশিমতো ব্যবহার করছি। আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে নারীদের হিজাব করা তথা পর্দা করার বিধান যে অর্থে আরোপ করেছেন; আমরা আজ সম্পূর্ণ বিপরীতার্থে হিজাবের অপব্যবহার করছি৷
মাথায় এক টুকরো কাপড় পেঁচিয়ে বাঁধাকপি স্টাইল করাকেই হিজাব পরিধান হিশেবে ভেবে নিচ্ছি। যেসব আকর্ষণীয় কালারফুল ওড়না মাথায় পেঁচিয়ে পুরুষের
চোখে নিজেকে আরো বেশি সুন্দরী হিশেবে উপস্থাপন করছি তাতে হিজাবের হক্ব কতটুকু আদায় হচ্ছে তাই লেখক তার সুদক্ষ লেখনীর মাধ্যমে আলোচ্য বইয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। মোটাদাগে বইটি নাসিহাহ মূলক একটি বই। তবে গতানুগতিক ধারায় লেখা যেসব নাসিহাহ মূলক বই রয়েছে তা থেকে বেরিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে সাহিত্যের মিশেলে লেখা চমৎকার একটি বই “হিজাব আমার পরিচয়।”
বইটির কলেবর দেখতে ছোট হলেও মনকাড়া সব শিরোনামের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বইটিকে ১২ টি অধ্যায়ে বিভক্ত করা হয়েছে। কুরআন ও হাদিস থেকে দেয়া যথাযথ রেফারেন্স বইটির অথেনসিটির প্রশ্নকে করেছে একদমই ক্লিয়ার। এই বইয়ের একটি বিশেষত্ব হচ্ছে লেখক হিজাবকে কখনো বড় বোন হিশেবে আবার কখনো বান্ধবী হিশেবে উপস্থাপন করেছেন। যা কখনো পাঠককে অত্যন্ত আদুরে গলায় বুঝিয়েছে আবার কখনো বা কড়া গলায় শাসন করেছে। আলোচ্য বইটি সম্পর্কে পাঠককে ধারণা দিতে কয়েকটি অধ্যায় থেকে সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ টানবো ইন শা আল্লাহ।
★”আত্মকথন” অধ্যায়ে হিজাব বলে গিয়েছে নিজের সম্পর্কে কিছু না বলা কথা। প্রকৃত অর্থে তাকে কিভাবে ব্যবহার করা উচিত ছিলো আর আজকের নারীরা তাকে কিভাবে ব্যবহার করছে তা নিয়ে অত্যন্ত আবেগপ্রবণ কিছু কথা শুনিয়েছে হিজাব নিজেই।
★বোন হয়ে অন্য বোনকে বিপথে চলে যেতে দেখলে যতটা কষ্ট হয় ঠিক ততটা কষ্ট হয় হিজাবের। সে তো নারী জাতির কল্যাণকামী৷ তার পরম শুভাকাঙ্ক্ষী। তাই “কল্যাণকামী চিরসাথী” অধ্যায়ে লেখক অত্যন্ত চমৎকারভাবে পাঠকের সামনে এই বিষয়টি তুলে ধরেছেন।
★আমরা মাথায় এক টুকরো কাপড় প্যাঁচানোর নাম দিয়েছি হিজাব। যা আমাদের সৌন্দর্যকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়ে নন মাহরাম পুরুষের চোখকে আরো বেশি আরাম দিচ্ছে৷ কিন্তু হিজাব তো তা নয়। আমরা যাকে হিজাব বলি আদতে তা হিজাব নাকি স্কার্ফ। তাই “হিজাব≠স্কার্ফ” অধ্যায়ে লেখক হিজাব এবং স্কার্ফের মধ্যে থাকা বিদ্যমান পার্থক্যকে অত্যন্ত সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করেছেন।
★ তুমি কি আসলেই স্বাধীন? তোমার শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কি তোমার মালিকানায়? তোমার প্রতিটি অঙ্গ দিয়ে যা মন চাই তাই করতে পারবে? এর কোন হিসেব হবে না? ব্যক্তিগতভাবে তুমি সম্পূর্ণ স্বাধীন? যা ইচ্ছে হয় তাই পরতে পারবে? কে শিখিয়ে দিলো এই ব্যক্তি স্বাধীনতার বুলি? এরকম চমৎকার কিছু প্রশ্ন পাঠকমনে ছুঁড়ে দিয়ে লেখক তার “পোশাক আমার, স্বাধীনতাও আমার” অধ্যায়ে জানতে চেয়েছেন উত্তরগুলো। পাঠককে নিশ্চুপ থাকতে দেখে নিজেই দিয়ে গেছেন তার যোগ্য জবাব। কুরআন ও হাদিসের আলোকে ভাঙ্গিয়ে দিয়েছেন কিছু ভুল ধারণা। দেখিয়েছেন সত্য পথের দিশা।
★ আমরা যখন শয়ত্বানের দেখানো ভুল পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজেদের ইজ্জত সম্মান খুইয়ে বসছি ঠিক তখনই লেখক তার “পথিক, পথ তো এই দিক” অধ্যায়ে আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন সঠিক পথ। আদর ও শাসনের মিশেলে ঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য চালিয়ে গেছেন এক তীব্র প্রয়াস৷
এরকম আরো সাতটি চমকপ্রদ অধ্যায় নিয়ে লেখক সম্পূর্ণ বইটিকে সাজিয়েছেন। নিঃসন্দেহে বইটি পাঠকমনে উপলব্ধির খোরাক জোগাবে। যা পাঠককে বিমোহিত করবে ইন শা আল্লাহ!
ভালোলাগা-মন্দলাগা:
_______________________
সমর্পণ প্রকাশনীর সকল কাগুজে কার্যই প্রশংসনীয় তবে “হিজাব আমার পরিচয়” বইয়ের মতো সংক্ষিপ্ত কলেবরের সমৃদ্ধ একটি বই প্রকাশনীকে করে তুলেছে আরো বেশি অনন্য। লেখকের চমৎকার ভাষাশৈলী পাঠককে বইটির প্রতি নিঃসন্দেহে আকৃষ্ট করবে। সহজবোধ্য শব্দচয়ন আর সাবলীল বর্ণনা সবশ্রেণীর পাঠকের জন্য বইটিকে করেছে সুখপাঠ্য। অত্যন্ত সহজ সাবলীল এবং প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা হলেও বইয়ের লেখনশৈলী পাঠকের হৃদয় কাড়বে ইন শা আল্লাহ। ভারী ভারী বই দেখলেই পাঠকমহল যেখানে পড়তে অনীহা প্রকাশ করে সেখানে এমন সংক্ষিপ্ত কিন্তু সমৃদ্ধ বইগুলো সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে। বইটিতে তেমন কোন ত্রুটি আমার নজরে পড়েনি। যথাযথ রেফারেন্স বইটিতে সমালোচনার সুযোগ রাখে না। তবে বইয়ের প্রচ্ছদ আরেকটু সুন্দর ও অর্থবহ হলে বইটিকে আরো বেশি আকর্ষণীয় মনে হতো বলে আমার ধারণা।
বইটি কেন পড়বেন:
___________________
কর্পোরেট বিশ্বে আজকের নারীরা তাদের দেখছে সম্পূর্ণ পশ্চিমা দর্শনের দর্পণে। তাদের আসল মান মর্যাদা কোথায় সে সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞানের অভাব আজ ধ্বংসের দাঁড় গোড়ায় নিয়ে এসেছে নারীদের। ফলে ভুলের চোরাবালিতে আটকে পড়ছে আমাদের সমাজে নারীরা। হারিয়ে ফেলছে মান ও মর্যাদা। কিছু ভুল তত্ত্বকে আঁকড়ে ধরে নিজেদের সুখ খোঁজে ফিরছে অহর্নিশ৷ দেহ প্রদর্শনের মাধ্যমে পর্দার মতো ফরজ বিধানকে তো বুড়ো আঙ্গুল দেখাচ্ছেই উপরন্তু ইজ্জত সম্মানও পশ্চিমাদের পায়ের তলায় বিকিয়ে বসছে। সেক্যুলার সমাজ শিখিয়ে দিচ্ছে হিজাবের সংঙ্গা আর আমাদের নারীরাও তোতা পাখির মতো তা আওড়িয়ে যাচ্ছে৷ জেনে, না জেনে আমি আপনি আমরা সবাই হয়তো সে ফাঁদে পা দিয়ে বসে আছি। মাথায় স্কার্ফ পেঁচিয়ে তাতে হিজাবের তকমা লাগিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছি।
লেখক অত্যন্ত সুদক্ষ লেখনীর মাধ্যমে এই অসঙ্গতিগুলোই বইয়ে তুলে ধরেছেন। এবং দেখিয়ে দিয়েছেন সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণের পথ। তাই “হিজাব আমার পরিচয়” বইটি পড়লে তা আপনার ভাবনার জগতকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিবে ইন-শা-আল্লাহ। নিজেকে নিয়ে নতুন ভাবে ভাবতে শেখাবে বারংবার। এবং বন্ধু রূপে পাশে থেকে পবিত্র ভূষণে অতি যত্নে আপনাকে সাজিয়ে তুলবে ইন শা আল্লাহ।
আপন অভিমত :
__________________
কিছু বই পড়লে নিজেকে নিয়ে ভাবার তাড়না জাগে। এই বইটির কিয়দংশ পড়েই আমার তেমনটা ফিল হয়েছে। বইটির কলেবর ছোট দেখে প্রথমে ভীষণ মন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। তারপর যখন পড়তে শুরু করলাম তখন রীতিমতো অবাক বনে যাই আমি। প্রতিটি অধ্যায় পড়তে গিয়ে বারবার মনে হচ্ছিলো, আরেহ, এ’তো আমাকে উদ্দেশ্য করে লেখা একেকটি শব্দমালা। লেখক যেন কথাগুলো আমাকেই বলছেন। জীবনের এতোগুলো বসন্ত পাড়ি দিয়ে এসেছি কতশত ভুলের ডানায় ভর করে তা ভেবে অনুশোচনার দহনে দগ্ধ হয়ে যাই আমি। হিজাবের গুরুত্ব না বুঝে তার কতই না অপব্যবহার করেছি তা ভেবেই ভয়ে মুষড়ে পড়ি। নিজেকে নিয়ে পুনরায় নতুন করে ভাবনার মোহনায় ডুব দেই। তাই গুরুত্বপূর্ণ কনটেন্ট, সমৃদ্ধ সাহিত্যমান লেখকের প্রতি ভরসার জায়গাটা অমূলক নয় মোটেই। রবের দেখিয়ে দেয়া পথ ও লেখকের অভিজ্ঞতালব্ধ আলোচনায় নিজেকে সংশোধন করার একটি মাধ্যম হতে পারে বইটি ইন শা আল্লাহ।
লেখক পরিচিতি:
____________________
ইসলামের সাহিত্য অঙ্গনে লেখক জাকারিয়া মাসুদ একটি পরিচিত ও জনপ্রিয় নাম। তিনি সত্যের আলোর সাথে পরিচিত হন ২০১১ সালে। লেখালেখির হাতেখড়ি ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে। সত্যের আলো থেকে যে শিক্ষা তিনি পেয়েছেন তাই ছড়িয়ে দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন লেখালেখির মাধ্যমে৷ অতি অল্প সময়ে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন পাঠক হৃদয়ে৷ হয়ে উঠেছেন সবার শ্রদ্ধাভাজন ও ভালোবাসার পাত্র। জনপ্রিয় এই লেখকের প্রথম বই “সংবিৎ”, দ্বিতীয় বই ‘ ভ্রান্তিবিলাস, তৃতীয় বই ‘তুমি ফিরবে বলে’, এবং চর্তুথ বই ‘হিজাব আমার পরিচয়’।
এছাড়াও তিনি সহলেখক হিশেবে কাজ করেছেন, ‘সত্যকথন’, ‘প্রত্যাবর্তন’ ও গল্পগুলো অন্যরকম বইতে।
শেষ কিছু কথা:
____________________
সময় বয়ে যায়, দেখতে দেখতে আমরা পৌঁছে যাই। জীবনের শেষ প্রান্তে৷ কিছু ভুল ও ভ্রান্তির বেড়াজালে কেটে যায় গোটা জীবন। আমাদের মন কখনো অনুসন্ধানী হয়ে উঠে না। খুঁজে পেতে চায় না সত্যের রোশনাই। তাই জীবনের যবনিকা শেষ হওয়ার আগেই আরেকটি বার চিনে নিতে হবে নিজেকে৷ মহান রব্বের প্রিয় হওয়ার সাধনায় নিজেকে আবৃত করে নিতে হবে হিজাবের আবরণে৷ সাজতে হবে নতুন ভূষণে। আজ থেকেই তবে শুরু হোক