আরণ্যক Pdf free Download
Aranyak Bibhutibhushan Bandyopadhyay Pdf Download
Title | আরণ্যক |
Author | বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় |
Publisher | বিশ্বসাহিত্য ভবন |
Edition | 1st Published, 2017 |
Number of Pages | 188 |
Country | Pdf free Download(পিডিএফ ডাউনলোড) |
Language | বাংলা |
আরণ্যক শব্দের অর্থ অরণ্য সম্পর্কীয়। পুরো বইটি সর্বত্র ঘিরে ছিল প্রকৃতি। গহীণ অরণ্যে জীবণযাপন , বিভিন্ন ধরনের মানুষ , হরেক রকম গাছপালা , পশু-পাখি। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন একজন জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক। তিনি তার রচনায় ফুটিয়ে তুলতেন সমাজের অতি সাধারণ মানুষের চিত্র, সাধারণ মানুষের দারিদ্রতার প্রতিচ্ছবি। আরণ্যক বইটিও তার ব্যাতিক্রম নয়। শুধু পার্থক্য হচ্ছে আরণ্যকের পটভূমি গড়ে ওঠেছে আমাদের গ্রাম – শহর হতে দূরে । সুদূর এক অরণ্যের গহীনে। ফুটে ওঠেছে পাহাড়ীদের জীবণ। সেখানের মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই । সেই লড়াই কখনো পাহাড়ী জন্তু জানোয়ারের সাথে, কখনোবা তীব্র ক্ষুধা মেটাতে দারিদ্রতার সাথে। “সত্যচরণ” নামক চরিত্র দিয়ে উপন্যাসের শুরু । কলকাতার আট-দশজন সাধারণ মানুষের মতো গ্রাজুয়েশন শেষ করে চাকরী খুজেছিল সে। টাকা পয়সার সঙ্কট ছিল অনেক। ঠিক এমনই এক সময় তার এক বন্ধু এক চাকরী দিল কিন্তু সে চাকরী করতে হলে তাকে থাকতে হবে শহর হতে দূরে এক অরণ্যে। আর্থিক সঙ্কটের জন্য সে রাজি হয়েছিল। তার পর সত্যচরণের চোখের মাধমে ফুটে ওঠেছে সেখানের মানুষদের দারিদ্রতা। আমরা ভাবি কলকাতার মানুষ দারিদ্র। কিন্তু সেখানে তিনি দেখিয়েছেন যে একটি কড়াই পেলে মানুষ কত খুশি হতে পারে। সাঁওতাল রাজকন্যা ভানুমতীকে সঙ্গী বানানোর মনোবাসনাও ছিল তার। এভাবেই নানা প্রকার মায়ায় জড়িয়ে যায় সে , যেতে মন চায় না আর জনমানবপূর্ণ কলকাতায়।
” আরণ্যক – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ”
উপন্যাস মানে বানানো গল্প আর কল্পনালোকের বিবরণ কিন্তু আরণ্যক নিছকি কাল্পনিক কোন পটভূমি নয়। অশিক্ষিত-দরিদ্র-অসহায় মানুষের অদ্ভুত-অজ্ঞাত জীবনধারা আর প্রকৃতির ভিন্নতর এক মুগ্ধতার আবেশ এই কাহিনীর ক্যানভাস। কংক্রিট এর শহরে বসে কল্পনাশক্তিকে জাগ্রত করে গভীর অরণ্যে অবগাহন করতে এই উপন্যাসের জুড়ি নেই।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১৯২৮ সালের স্মৃতি কথা থেকে জানা যায় ঐ সময়ে ভাগলপুরে থাকাকালীন ‘আরণ্যক’ লেখার পরিকল্পনা শুরু করেন। সেই থেকে শুরু করে ৩৯ সাল অবধি চলে এই কাহিনী বইয়ে রূপদানের কাজ। বিভূতিভূষণের রচিত চতুর্থ উপন্যাস এটি যা ১৯৩৯ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। লেখক বিহারে তাঁর কর্মজীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে উপন্যাসটি রচনা করেন।
উপন্যাসের নায়ক সত্যচরণ হলেও প্রধান চরিত্র যেন জঙ্গল।কলকাতার রাস্তায় চাকরির জন্য ঘুরে ভেড়ানো এক যুবক যে চাকুরির জন্য চলে আসে সভ্যতা বর্জিত জঙ্গলে। জঙ্গলের রহস্যভরা মঞ্চে প্রতিদিন মঞ্চায়িত হওয়া নাটকের সে শুধুমাত্র একজন দর্শক। যে শুধুমাত্র বাইরে থেকে কেবল এই নাট্যাভিনয় দেখেছে আর তার জ্ঞানে ও অনুধাবন শক্তির প্রয়োগে এই উপন্যাসের কাহিনী বর্ণনা করে গেছে।
উপন্যাসের প্রতি পদে পদে রয়েছে জঙ্গলের রম্যরহস্য সব বর্ণনা। প্রকৃতির অসীম সব সৌন্দর্যের আর বর্বরতার বর্ণনা। কাহিনীতে আছে খাদ্যাভাবের কথা, আছে মহামারীর কথা। কী নির্মমভাবে মহামারীতে গ্রামের অগণিত মানুষ অকালে ঝরে পড়ছে। চিকিৎসার অভাব, খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের অভাব, জঙ্গলের বিভিন্ন জনপদে কী ভয়াবহ ইতিহাস গড়ে উঠেছে, তারই বিশ্বস্ত ভাষ্য নির্মাণ করেছেন বিভূতি পরম মমতায় আর অভিজ্ঞতার নির্যাসে। এ যেন এক মহাকাব্যিক কাহিনী! যা বংলা সাহিত্যের সেরা দশ উপন্যাসের একটি।
যাপিত জীবনে আমরা অনন্তকাল থেকে পার করে আসছি সমূহ সব প্রতিকূলতা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ-মহামারী- এমনসব নানান সমস্যার কাল দেখতে দেখতে আর মোকাবিলা করতে করতে বনের পর বনের স্থানে নির্মিত হয়েছে মানব-সভ্যতা।
“আরণ্যক, হে অরণ্যানীর আদিম দেবতারা,ক্ষমা করিও আমাদের ”
পর্যটন কিংবা সভ্যতার পথে অগ্রসরতা এ সব কি প্রকৃতির ধ্বংস যোগ্য নাকি সভ্যতা? আরণ্যক-এর ক্যানভাস এরই চিরন্তন সাক্ষ্য বহন করছে।
বইঃ আরন্যক
লেখকঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
‘গভীর রাত্রে ঘরের বাহিরে একা আসিয়া দাঁড়াইয়া দেখিয়াছি, অন্ধকার প্রান্তরের অথবা ছায়াহীন ধূ-ধূ জ্যোছনা ভরা রাত্রির রুপ। তার সৌন্দর্যে পাগল হতে হয় – একটুও বাড়াইয়া বলিতেছিনা। আমার মনে হয় দুর্বলচিত্তের মানুষ যাহারা তাহাদের পক্ষে সে রুপ না দেখাই ভাল, সর্বনাশী রুপ সে, সকলের পক্ষে তার টাল সামলানো বড় কঠিন’।
ঠিক বই এর রিভিও না। বলতে গেলে আমার বই পড়ার অনুভূতি ব্যক্ত করলাম।
আপনি যদি প্রকৃতি ভালবেসে থাকেন তাহলে বইটি আপনার জন্যই। আর যদি এতটাও ইন্টারেস্টেড না হন তাহলেও বইটা আপনাকে মুগ্ধ করবে।
সত্যচরণকে উপন্যাসের শুরুতে গোষ্ঠচরণবাবু বলেছিলেন ‘জঙ্গল আপনাকে পেয়ে বসবে’। আর লেখকের ক্ষেত্রে যেমন কথাটা সত্য হয়েছিলো তেমনি পাঠক হিসেবেও সত্যিই বইটা আমাকে পেয়ে বসেছিলো।
উপন্যাসের শুরুতে বেকার সত্যচরণকে তার বন্ধু অবিনাশ এর বাবা জমিদার কাছারিতে একটা চাকুরি দেন পূর্ণিয়া জেলায়।আর এতে সত্যচরণ রাজিও হয়ে যায়।কিন্তু নতুন জায়গায় এমন নির্জন পরিবেশে লেখকের মন দমে যায়। কিছতেই নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারেনা।
কিন্তু আস্তে আস্তে যেন প্রকৃতির মোহে নিজেকে হারাতে দেখে সত্যচরণ। এভাবেই এগোতে থাকে লেখকের লুবটলিয়ার দিনগুলো।
উপন্যাসে প্রকৃতিই আসল চরিত্র যে অন্য চরিত্রগলোকে তার মাঝে বেড়ে উঠতে দিয়েছে। মটুকনাথ এর পাঠশালা, যুগলপ্রসাদের ফুল গাছ লাগানোর পাগলামি, বড় নকছেদি, মঞ্চি, রাজু পাড়ে, দরিদ্র কুন্তা এই সবগুলা চরিত্র লেখক যেন জীবন্ত করে তুলেছেন।
এই বইটা পড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম বলতে গেলে। সত্যচরণের মতো যদি প্রতিদিন ঘোড়ায় চড়ে প্রকৃতিতে ঘুরে বেড়াতে পারতাম। কিংবা যুগলপ্রসাদের মতো নানান জায়গা থেকে ফুল এনে নিজের মতো প্রকৃতিতে বাগান করতে পারতাম। ‘সরস্বতী কুণ্ডে’ মন কাড়া ফুলের গন্ধে নিজেকে হারিয়ে ফেলতাম যদি। হয়তবা নীল গায়ের দেবতার সাথে সাক্ষাত করতে পারতাম। পাহাড়ের রাজকন্যা ভানুমতির সাথে গড়তে পারতাম ভালবাসার বন্ধন।রাত জেগে বন্য প্রাণীর ডাক শুনা, হয়ত বাঘ কিংবা হিংস্র নেকড়ের আওয়াজ শোনা এসবের মাঝে নিজেকে কল্পনা করতে ভালই লেগেছে।
প্রকৃত্রি বাইরে উপন্যাসে লুবটলিয়ার মানুষের দারিদ্র্যতার দিকটিও ফুটে উঠেছে। যে মানুষগুলো একবেলা ভাত খেতে পারেনা, ছাতু, কলাই সিদ্ধ যাদের প্রতিদিনকার খাবার, প্রচন্ড শীতে শুধু একটা চাদর গায়ে থাকে তাদের কথা ভাবলে মনের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠে।
উপন্যাসের পরিসমাপ্তিটা বেদনাদায়ক। আর সেটা জানতে হলে পড়ে ফেলতে হবে বইটি।
(‘আরণ্যক’ উপন্যাস বিভূতিবাবুর এক অনবদ্য সৃষ্টি। যেটা পড়ে উনার লিখনির প্রতি নতুন করে ভালবাসা জেগেছিল। ১৯৩৯ সালে প্রকাশিত এটি তার চতুর্থ উপন্যাস। বইটি লেখকের কর্মজীবনের এক অংশের অভিজ্ঞতার আলোকে লিখা।)
আরণ্যক – বিভূতিভুষন বন্দোপাধ্যায় Pdf