চিলেকোঠার সেপাই Pdf free Download
উপন্যাস | চিলেকোঠার সেপাই পিডিএফ |
Author | আখতারুজ্জামান ইলিয়াস |
Publisher | দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড(ইউ পি এল) |
ISBN | 9789845060523, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ছোট গল্প pdf |
Edition | 20th Print, 2015 |
Number of Pages | 305 |
Country | বাংলাদেশ |
Language | epub, MOBI, Pdf free Download(পিডিএফ ডাউনলোড) |
চিলেকোঠার সেপাই (The Soldier in an Attic) বাংলাদেশের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লেখা একটি উপন্যাস। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বসময়কার গণজাগরণের প্রেক্ষাপটে এ উপন্যাসের আখ্যানভাগ গড়ে ওঠেছে। উপন্যাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এর মনোবিশ্লেষণ। উনসত্তুর সালের প্রবল গণঅভ্যুত্থানের যারা প্রধান শক্তি ছিল, সেই শ্রমজীবী জনসাধারণ কিভাবে আন্দোলন-পরবর্তী সময়টিতে প্রতারিত এবং বঞ্চিত হলো, বামপন্থীদের দোদুল্যমানতা আর ভাঙনের ফলে, জাতীয় মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে যথাযথভাবে ধারণ করতে না পারার ফলে অজস্র রক্তপাতের পরও রাজনীতির ময়দান থেকে তাদের পশ্চাদপসরণ ঘটলো, আওয়ামী লীগ প্রধান শক্তি হয়ে উঠলো, উপন্যাসটির উপজীব্য সেই ঐতিহাসিক সময়টুকুই।
গ্রন্থের প্রধান তিনটি চরিত্র ওসমান, আনোয়ার এবং “হাড্ডি খিজির”। চিলেকোঠার সেপাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে রোববার নামীয় সাপ্তাহিক পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় এবং ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এর অভিনব কাঠামো এবং নতুন ভাষা-ভাঙ্গী পরবর্তী প্রজন্মের নতুন লেখকদের বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত ও প্রভাবান্বিত করে যার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ শহিদুল জহির।
এই উপন্যাসে একদিকে হাড্ডি খিজির যেমন মহাজনের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়ে উঠতি আওয়ামী লীগের নেতা আলাউদ্দীন মিয়ার ধমক খায়, গ্রামে গ্রামে গরুচোরদের রক্ষাকর্তা জোতদারদের রক্ষায় রাষ্ট্র-সামরিক বাহিনী-আওয়ামী রাজনীতি একাকার হয়ে যায়। ঢাকা ক্লাব থেকে আইয়ুব বিরোধী মিছিলে গুলি বর্ষণ করা হলে উত্তেজিত জনতা ক্লাবটিতে আগুন ধরাতে যায়, আর বাঙালি-বাঙালি ভাই ভাই আওয়াজ তুলে তাদেরকে রক্ষা করা হয়। গ্রামে জোতদারদের বিরুদ্ধে স্বতস্ফূর্ত মানুষের গণআদালতেও আইয়ুবের দালালরা রক্ষা পায় জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ছায়ায়। এই দালালদের বুদ্ধিমান অংশ অচিরেই যোগ দিয়ে জাতিয়তাবাদী রাজনীতিকে আরও পুষ্ট করে। ওদিকে ওসমান তার মধ্যবিত্ত দোদুল্যমানতা আর জনগণের সাথে মিলনের আকাঙ্ক্ষায় মাঝে দোল খায়, এ্ই দোলাচল তাকে পরিণত করে সিজোফ্রেনিয়ার রোগীতে। মধ্যবিত্ত বামপন্থী আনোয়ার গ্রামে যায় কৃষিবিপ্লব সাধন করতে, এবং নতুন কোন উপলদ্ধি ছাড়াই এই প্রক্রিয়ার ভেতর তার ভূমিকা পালন করে যায়।
দরজা খুললেই নিচে নামবার খাড়া ঝাপশা সিড়ি।সিড়ির সবচেয়ে ওপরের ধাপে দাড়িয়ে রয়েছে ১৪/১৫ বছরের একটি ছেলে ।ওসমানের ঘরের খোলা জানলা দিয়ে আলো এসে পড়েছে ছেলেটির শরীরের ওপরের ভাগে।গায়ে নীল রঙের হাফ হাতা হাওয়াই শার্ট,ফ্ল্যাপের নিচে দুটো বুকপকেট,ডান পকেটের উপর ঘন খয়েরি সুতার এমব্রয়ডারি করা প্যাগোডার মাথা।
আমার মনে হয় অন্যান্য যে কোন উপন্যাস থেকে রাজনৈতিক
উপন্যাস লেখা অনেক কঠিন। রাজনৈতিক গল্প যদি বাস্তবতার সাথে
মিল না থাকে তাহলে যেমন সমালোচনার খোরাক যোগায়
তেমনি কাল্পনিক হলে তা হারায় পাঠাকের আগ্রহ। আখতারুজ্জামান
তার লেখাতে বিপ্লব স্যুট-টাই পড়া রুমে বসে তত্ত্ব দেয়া
বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে করান নি। বস্তির শ্রমিক আর গ্রামের
খেঁটে খাওয়া মানুষেরাই তার বিপ্লবের নায়ক।
সমরেশের গর্ভধারিণী বইটা পড়ে রাজনৈতিক উপন্যাসের হাতে খড়ি।
হুমায়ূন আহমেদের দেয়াল আর তারপর শুরু করলাম
আখতারুজ্জানের চিলেকোঠার সেপাই। আমি তুলনা করছিনা
কোনটা ভালো কোনটা মন্দ, তবে হ্যাঁ এটা আমারই দুর্ভাগ্য যে
চিলেকোঠার উপন্যাসটা অনেক দেরীতে পড়লাম।
ষাট সালের দিকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থান তথা বাংলাদেশের
রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও আন্দোলন সাক্ষী চিলেকোঠার
সেপাই। প্লট মূলত উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান। গল্পের প্রধান
চরিত্র রঞ্জু ওরফে ওসমান, ওসমানের বন্ধু আনোয়ার আর
আলতাফ। আছে রিকশা শ্রমিক বস্তি বাসিন্দা খিজির। আনোয়ার
বামপন্থী আর আলতাফ ডানপন্থী। আনোয়ার আর আলতাফের কথাবার্তার মাধ্যমে লেখক অনেক জটিল রাজনৈতিক
জটিলতাকে মুক্তি দিতে চেয়েছেন। গল্পের ফোকাস
কখনো ছিল হাড্ডি খিজিরের উপর, কখনো বা আনোয়ারের
উপর। তবে পুরো গল্পে অস্তিত্ব ছিল ওসমানের।
ঢাকার এক ঘিন্জি গলির মধ্যে বাস ওসমানের। সে এক অফিসের
জুনিয়র কর্মকর্তা। তার বন্ধু আলতাফ, আনোয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক
কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে কিন্তু ওসমান কোনকিছুতেই নেই।
সে যেন চিলেকোঠাতে বন্দী। লেখক ওসমান চরিত্রটিকে
রহস্যময় করে তৈরি করেছেন।
ওসমান যে বাসায় ভাড়া থাকে সেটা আবার আইয়ুবপ্রেমী মহাজন
রহমতউল্লাহর। খিজির ছোটবেলা থেকে রহমতউল্লাহর খেয়ে
দেয়ে মানুষ। শ্রমিক হিসেবে থাকে তার গ্যারাজে। কিন্তু এই
খিজিরই একসময় হয়ে ওঠে বিপ্লবী। বিভিন্ন প্রকার রাজনৈতিক
কর্মসূচীতে অংশগ্রহণের সাথে সাথে খিজির তার মহাজন
রহমতউল্লাহ্র বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে। সৈনিকের
গুলিতে মৃত্যু হয় খিজিরের।
আনোয়ার কলেজের শিক্ষক। ঢাকার উত্তাল আন্দোলন
ছেড়ে সে চলে যায় গ্রামে। শ্রেণী বৈষম্য ভাঙতে সে
বদ্ধ পরিকর। আফসার গাজী, খয়বার গাজী, হোসেন আলী
নামক শোষক মহাজনদের হাতে জিম্মি খেঁটে খাওয়া যমুনা
পাড়ের সাধারণ মানুষদেরকে মুক্তি দেয়া তার প্রধান উদ্দেশ্য।
খয়বার গাজী, আফসার গাজী লতায় পাতায় আনোয়ারের আত্মীয়
হলেও সে তাদেরকে ক্ষমা করতে রাজি নয়। কিন্তু না, শেষ
পর্যন্ত তা আর হয়ে ওঠেনা। শহরের রাজনৈতিক হাওয়া গ্রামে
লাগলে উল্টে যায় সবকিছু। যেই মাহজনদেরকে গ্রামের মানুষ
শাস্তি দিতে চেয়েছিলো, আলী বক্স আর আনোয়ারদের
দাপটে মাহজনের অবস্থা যখন নড়বড় তখন সেই মহাজনেরাই
নতুন রাজনৈতিক হাওয়ায় ফিরে আসে আগের অবস্থানে। সাধারণ
মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়না।
ওসমান কোন আন্দোলনে তেমন নেই কিন্তু সে দিন-রাত্রি
স্বাধীনতা আর মুক্তি নিয়ে ভাবে। আন্দোলনে রাস্তায় বের
হওয়া মানুষ দেখলে সে যেন ক্ষিপ্র হয়ে ওঠে। যেমন……
ওসমান ভাবতে থাকে……
বাংলা বাজার , তাঁতি বাজারের মানুষ লুপ্ত-খালের হিম হৃদপিণ্ড
থেকে উঠে এসেছে?? ঐ তো ইব্রাহীম খাঁর আমলে
শাহজাদা খসরুর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত পাগড়ি পড়া সেপাইরা।
শায়েস্তা খাঁর টাকায় আট মণ চালের আমলে না খেয়ে মরা
মানুষ দেখে ওসমান আঁতকে ওঠে। ৩০০ বছর ধরে তাদের
খাওয়া নাই, – কেউ চুলের তরঙ্গ উরিয়ে তারা এগিয়ে চলে
পায়ে পায়ে।
মোগলের হাতে মার খাওয়া, মগের হাতে মার খাওয়া,
কোম্পানির বেনেদের হাতে মার খাওয়া- সব মানুষ না এলে
মিছিল কি এত বড় হয়??
উনসত্তর যে স্বাধীনতা আন্দোলনকে চূড়ান্ত রুপ দেয় আর
এই উনসত্তরই যে হাজার বছরের বাংলার শোষণ থেকে মুক্তির
সুরহা দিয়েছে লেখক ওসমানের চিন্তার মাধ্যমে তা
দেখিয়েছেন।
ওসমানের বাবার বাড়ি ইন্ডিয়া। কিন্তু ওসমান কোন মতেই এদেশ
ছেড়ে যেতে রাজি নয়। সে একা থাকে এখানে। দেশের
প্রতি ভালোবাসা থেকেই সে বলে ফেলে…
যতই ইন্ডিয়া নিয়ে যাক, ঐ খাটো-ধুতি খালি গা, খালি পা
হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের সাধ্য কি ওদের দুই ভাইবোনকে
এই পাড়া থেকে শেকড় শুদ্ধ উপড়ে ফেলে?? ওসমান ঐ
তো দেখতে পাচ্ছে, অপরিবর্তিত শাঁখারি পট্টির কলের
ধারে ধারে কলসি, বালতি ও হাঁড়ির সারি।
একসময় শিজোফ্রেনিয়াতে আক্রান্ত হয় ওসমান। স্বাধীনতার
নেশা’ই হয়তো তাকে পাগল করে ফেলে।
বিপ্লবীদের নেশা হয় প্রবল।শুনেছিলাম চে গুয়েভারা এলএসডি নামক ড্রাগ খেতেন,এটা নাকি তাকে বিপ্লবের রঙ দেখিয়েছিল।যে রঙ অপার্থিব,অমিশ্রিত।সেভাবেই এক মাদকের মতো আমার রক্তে মিশে গেছে স্বাধীনতার প্রেম,আর তার খোরাক যোগায় এক চিলেকোঠার সেপাই।
সুদীপ্ত চক্রবর্তী
চিলেকোঠার সেপাই Pdf – Chilekothar shepai Pdf Download link: