(Pdf) নববধুর উপহার পিডিএফ ডাউনলোড
বইটির নাম প্রিয়তমা দেখে বইটি আমার প্রিয়তমার জন্য নিয়েছিলাম। এই সব বই সম্পর্কে কিছু বলা একধরনের ধৃষ্টতা । ওমর খৈয়ামের ভাষায় কিছু বই অনন্ত যৌবনের বই, যাদের কোন ক্ষয় নেই। এটা তেমনি একটি বই। যারা এখনো পড়েন নি নিঃসন্দেহে নিঃসংকোচে বইটি হাতে নিয়ে পড়া শুরু করেন।
বইয়ের নাম | প্রিয়তমা |
Author | সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর |
Publisher | নবপ্রকাশ |
ISBN | 9789849265597 |
Edition | 1st Published, 2017 |
Number of Pages | 352 |
Country | বাংলাদেশ |
Language | পিডিএফ ডাউনলোড লিংক |
আমাদের সমাজের প্রায় প্রতিটি পরিবারে আজকাল শোনা যায় স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য কলহ, পরস্পরের বিশ্বাসহীনতা, সংসার ভাঙ্গার করুন সুর। দাম্পত্য কলহের বিষবাষ্প যেন ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে আমাদের চারপাশ। কিন্তু আমরা নিজেদের কি কখনো রাসূল ও তাাঁর স্ত্রীদের মুখোমুখি দাড় করিয়েছি?
কখনো কি তাঁদের সংসারের আদলে আমাদের সাংসারিক সমস্যাগুলো মোকাবেলা করার চেষ্টা করেছি?
অথচ তাঁদের জীবনে রয়েছে প্রেম আর ভালোবাসায় পূর্ণ এক সংসারের ছায়াছবি। তাঁদের দাম্পত্যজীবনের অসংখ্য অনুপম শিক্ষা সমগ্র পৃথিবীর জন্য শিক্ষণীয়।
যে গ্রহণ করবে তার জীবন আলোকিত হবে।এই গ্রন্থে সেই সুখী আর প্রেমময় জীবনের গল্পই বলেছে।
★গ্রন্থালোচনা ★
“প্রিয়তমা”নামকরণের কারণ :
এতে উম্মুল মুমীনিন তথা রাসূলুল্লাহ (সা:) এর প্রিয়তমা স্ত্রীদের কথা এতে উল্লেখ করেছেন।
“প্রিয়তমা” রাসূলপত্নীদের জীবনীগ্রন্থ নয়, বরং তাঁদের জীবনের সুরম্য গল্পভাষ্য। জীবনের গল্পগুলো জীবনীর মতো নয়, তা উপস্থাপন করা হয়েছে গল্পের আদলে। জীবনের গল্প বলতে গিয়ে উঠে এসেছে তাঁদের সঙ্গে রাসূলের দাম্পত্য ভালোবাসা, সাংসারিক প্রেম, পারস্পরিক সৌহার্দ, জীবনযুদ্ধে লড়ে যাওয়ার সঞ্জীবনী, নারী অধিকার, নারীশিক্ষাসহ আরো অনেক অজানা কাহিনীকাব্য।
আয়েশা (রাঃ) বউ হিসেবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ঘরে আসার কিছু দিন পরের ঘটনা।
তাঁর কিশোরী মনে নানা প্রশ্নের উদয় হয়, অকারণ কৌতুহল দোলা দিয়ে যায় মনে। রাসূল (সা:) কাকে অধিক ভালোবাসেন? তাঁকে কতটুকু ভালোবাসেন? অন্য স্ত্রীদের চেয়ে বেশি না কম?
একদিন সাহস করে জিজ্ঞেস করেই ফেললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে কতটুকু ভালোবাসেন?
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একটু চিন্তা করে বললেন, তোমার এবং আমার মধ্যে ভালবাসার বন্ধনটা এত শক্ত, যেমন একটা রশির মধ্যে সুতাগুলো শক্তভাবে জড়িয়ে থাকে। একই বাঁধনে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা থাকে। রাসূলের জবাব শুনে তিনি অত্যন্ত খুশি হলেন।
এবং এরপর থেকে মাঝে মাঝেই জিজ্ঞেস করতেন, হে আল্লাহর রাসূল!
বন্ধন কি আগের মতোই আছে না ঢিল হয়ে গেছে?
রাসূলুল্লাহ (সা:) তাঁর দুষ্টুমির জবাবে বলতেন বন্ধন আগের মতোই দৃঢ় আছে। বাঁধনে কোন দুর্বলতা বা পরিবর্তন আসেনি।
একবার হযরত মায়মুনা বিনতে হারিস (রা:) গিরগিটির গোশত রান্না করেন।
রাসূলুল্লাহ দেখে বললেন আমি তা খেতে পছন্দ করি না, সাহাবীদের বললেন তোমরা খেতে পারো। মায়মুনা (রা:) হয়তো আগে এ মাংস খেতেন কিন্তু রাসূলের অপছন্দ দেখে তিনি নিজের অপছন্দের কারণ বানিয়ে নিলেন।
এ কেবল দু’জনের মাঝে অপরিসীম ভালোবাসা থাকলেই সম্ভব।
একজন সঙ্গী যখন তার অপর সঙ্গীর পছন্দ- অপছন্দকে নিজের সৌভাগ্যের ললাট লিখন করে নেয় তখন এ ভালোবাসা জাগতিক সকল ক্ষুদ্রতা ও পরিসীমা ছাড়িয়ে যায়।
এমন ভালোবাসার জন্যই যুগে যুগে রচিত হয়েছে অসংখ্য মহাকাব্য।
রাসূলের ভালোবাসার ছায়ায় থেকে সকল উম্মুল মুমীনিনই নিজেদের কোনো না কোনো মহত্ত্বে উচ্চকিত করে তুলেছিলেন। কেউ ছিলেন, হাদিসবিশারদ, কেউ জ্ঞানের আধার, কেউ খোদাভীতিতে অতুলনীয়, কারো ছিলো কোরআন পাঠের মুগ্ধকর চরিত্র, তেমনি কেউ ছিলেন দানশীলতায় এগিয়ে।
আমরা দুই থেকে তিনজন উম্মুল মুমীনিনের জীবনী সহ রাসূলুল্লাহ এর সাথে বিবাহ পরবর্তী,ও পারিবারিক সকল ঘটনাই মোটামুটি জানি।
বাকি আট থেকে নয় জনের ব্যাপারে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া পর্যন্তই আমাদের জ্ঞান স্থগিত।
প্রিয়তমা বইটিতে এগারজন উম্মুল মুমীনিনের রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আগ থেকে বিবাহ পরবর্তী জীবন, রাসূলের সাথে কেমন করে দিন অতিবাহিত করেছেন, আর তাঁর সাংসারিক জীবন কেমন ভালবাসাপূর্ন ছিলো তা খুব যত্নের সহিত লেখক আমাদের জানিয়েছেন।
কোনো একজন আম্মাজান রান্নায় পারদর্শী ছিলেন, রাসূলুল্লাহ তাঁর রান্নার প্রশংসা করতেন।
কেউ তীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী ছিলেন, রাসূল সা: এর তাঁর বুদ্ধির তা’রীফ করতেন।
নারীদের বিষয় গুলোতে (যেমন অন্য স্ত্রীদের একটু অন্য চোখে দেখা) তিনি অন্য স্ত্রীদের সতর্ক করে দিতেন।
কেউ ভুল করলে রাসূল সা: তাদের ভুল শুধরে দিতেন।
আবার তিনি স্ত্রীদের কাছে নিজের প্রবল ব্যক্তিত্ত্বের বাহাদুরি প্রকাশ করতেন না, নিজেকে স্ত্রীদের কাছে সমর্পণ করে দিতেন তাদের ভালোবাসার কাছে।
মোট কথা রাসূল সা:এর জীবনের টুকরো টুকরো আয়না ছিলেন তারা।
যে আয়নায় তাকালে রাসূলের জীবনের ছায়াচিত্র স্বচ্ছ হয়ে ভেসে উঠবে।
তাঁরা তাঁর আলোকেই নিজেদের জীবনকে সাজিয়ে তুলেছেন এবং মুসলিম উম্মাহর জন্য উৎসর্গ করছিলেন তাঁদের লব্ধ জ্ঞানের আধার।
আমাদের লৌকিক সমাজের প্রায় প্রতিটি পরিবারেই শোনা যায় স্বামী স্ত্রীর দাম্পত্যকলহ, মানসিক টানাপোড়ন, পরস্পরের বিশ্বাসহীনতা, সংসার ভাঙ্গার করুণ সুর। আমরা কখনো কি তাঁদের সংসারের আদলে আমাদের পারিবারিক সমস্যা গুলো দূর করার চেষ্টা করেছি? হয়তো করা হয়নি! অথচ তাঁদের জীবনে রয়েছে প্রেম আর ভালোবাসা পূর্ণ এক সংসারের ছায়াচিত্র।
যা সমগ্র পৃথিবীর জন্য শিক্ষণীয়। যে গ্রহণ করবে তার জীবন আলোকিত হবে।
এ গ্রন্থটিতেই সেই সুখী আর প্রেমময় জীবনের গল্পই বলা হয়েছে।
★মন্তব্য: অনেকে নাম দেখেই নেগেটিভ আচরণ করেছেন তাদের বলছি জাষ্ট দুই পেইজ পড়ে দেখুন তারপর আপনিই ডিসিশন নিন নামটা স্বার্থক হয়েছে কিনা।
বইয়ের ব্যাপারে বলবো, আমরা সবাই নরমালী ফল খাই বা খেতে পছন্দ করি।
সেই ফল কে লেখক জুস আকারে আমাদের খাইয়েছেন।
যাতে উপকরণ বেশি থাকলে ও খাবার কিন্তু পিওর আবার টেষ্ট ও একটু বেশি।
আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) মুস্তালিক যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে হার হারিয়ে গেলে তিনি তা খুঁজতে গিয়ে দেরি করে ফেলেন। ফিরে এসে দেখেন কাফেলা তাকে ফেলে চলে গেছেন।
এর কিছুক্ষণ পর এক সাহাবা এসে তাকে চাদর দিয়ে ঢাকা অবস্থায় পান।
আমার জানা ছিলো যে, রাসূলুল্লাহ প্রতি যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে পিছনে একজন সাহাবা কে রেখে আসতেন।
যাতে তিনি কাফেলা কোন কিছু ফেলে আসলে তা নিয়ে আসতে পারেন।
কিন্তু বইয়ে লিখা ছিলো সাহাবী আফওয়ান( রাঃ)অধিক ঘুমকাতুরে ছিলেন তাই তিনি দেরিতে ঘুম থেকে উঠে রওয়ানা করলেন।(ঐ বিষয়টি উল্লেখ ছিলো না, হয়তো আমার জানায় ভুল ছিলো )
আম্মাজান সাওদা (রাঃ) এর বয়সের স্থানে একটু হেরফের হয়েছে দেখলাম।
এক জায়গায় লিখা বিয়ের সময় বয়স ছিলো ৫৫বছর। আরেক জায়গায় ৫০বছর।
বাদবাকি চমৎকার উপস্থাপনা।
এক কথায় ভালো লাগার মতোই।
রাসূলুল্লাহর প্রিয়তমাদের আল্লাহ পাক শান্তিতে রাখুক।
সবাইকে পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে শেষ করছি।
বইয়ের নামঃ প্রিয়তমা
লেখকঃ সালাহউদ্দিন জাহাঙ্গীর
প্রকাশকঃ নবপ্রকাশ
মূল্যঃ ৫২০ টাকা
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৩৫০
প্রচ্ছদ সুচীশৈলিঃ রাবেয়া আফরোজা
বিষয়ঃ আল্লাহর রাসুল সা. এর সম্মানিত প্রিয়তমা রাদিয়াল্লাহু আনহাদের সাথে রাসুলুল্লাহর দাম্পত্যজীবনের পূর্ণ ছায়াছবি ।
[রিভউ]
সাফিয়্যা রাদিয়াল্লাহু আনহার বিয়ে হয়েছিল ইয়াহুদী গোত্রপতি আবুল আকিকের সাথে। খায়বার যুদ্ধ আসন্ন তাই পিতা তাড়াহুড়ো করেই এ বিয়ের আয়োজন করেন। বিয়ের রাতে অদ্ভুত একটা স্বপ্ন দেখেন সাফিয়্যা! উনি দেখেন আকাশের একটা উজ্জ্বল তারকা খসে পরছে, একসময় তা এসে উনার কোলে জায়গানিল। স্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন, স্বামীর ঘুম ভাঙিয়ে খুলে বললেন স্বপ্নের কথা। স্বামী প্রবর রেগেই আগুন, কী! আমার ঘরে বসে আরবের রাণী হওয়ার স্বপ্ন দেখো! সজোরে থাপ্পড় কষলেন। সাফিয়্যার গালে কালশিটে দাগ পড়ে গেলো। এর অল্প দিন পরেই খায়বার বিজয় হয় মুসলমানদের হাতে। পিতা ও স্বামী হারিয়ে অনাথ হয়ে পরেন তিনি, বন্দি হয়ে আসেন মুসলমানদের হাতে। আল্লাহর রাসুল সা. তাকে সম্মানিত করেন উম্মাহাতুল মুমিনিনের মর্যাদা দিয়ে। স্বপ্ন পুড়ন হয় সাফিয়্যার। আরবের রাণীর সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হোন। হোন রাসুলের প্রিয়তমায়। এমন অসংখ্য জানা অজানা প্রেমময় উপাখ্যান সন্নিবেশিত হয়েছে ‘ প্রিয়তমা’য়।
রাসুল সা. এর স্বভাবজাত অভিজাত্য, ব্যক্তিত্ব আর নবুয়ত, ৩৮ বছরের দাম্পত্য জীবনে ১১ জন স্ত্রীর সান্নিধ্য কাটিয়েছেন। প্রত্যেক উম্মাহাতুল মুমিনিন ছিলেন স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। কেউ ছিলেন আল্লাহর রাসুলের থেকে বয়সে বেশ বড়, কেউ কাছাকাছি বয়সের আবার কেউ বেশ ছোট। কতক ছিলেন আরবের ধনী পরিবারের দুলালী আবার কতক ছিলেন দরিদ্র কুটিরের ফুল। নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতির ছিলেন যেমন তেমনই ছিলেন সম্পূর্ণ ভিন্নভাষার, ভিন্ন সংস্কৃতির। এতো ভিন্নতা বৈরিতা নিয়ে আল্লাহর রাসুলের দাম্পত্যজীবন কেমন ছিল অন্য সবার মতো আমারো জিজ্ঞাসা ছিল অনেকদিনের। আম্মিজান খাদিজা আর আম্মিজান আয়েশা রা. সম্পর্কেই অল্প বিস্তর জানাশোনা অধিকাংশ মানুষের অথচ উনারা ছাড়া আরো ৯ জন আম্মি সম্পর্কে আমরা কতটাই জানি! প্রিয়তমা পাঠের আগে অনেক কিছুই জানতামনা তা নির্দ্বিধায় স্বীকার করছি।
উম্মাহাতুল মুমিনিনরা ছিলেন আল্লাহর রাসুলের প্রিয়তমা। আল্লাহর রাসুল দিনের দুই তৃতীয়াংশ সময় কোন না কোন স্ত্রীর ঘরে কাটাতেন। উনার জীবনের এই দীর্ঘ সময় আমাদের জন্য অজানাই ছিল প্রায়! যা ছিল তাও ছড়ানো ছিটানো ফলে দীর্ঘ পাঠের মাধ্যমেই সে সময়গুলো সম্পর্কে আমরা অবগত হতে পারতাম ফলে অধিকাংশের এই অংশটা সম্পর্কে আবছা আবছা ধারণাতেই সীমাবদ্ধ থেকে যেতো। লেখক সালাহউদ্দিন জাহাঙ্গীর দীর্ঘ পরিশ্রম ও সাধনা করে আমাদের জন্য উপহার দিয়েছেন ‘প্রিয়তমা’। আল্লাহর রাসুলের প্রিয়তমাদের এক মলাটের ভেতরে সন্নিবেশিত করেছেন। ইতিহাস ঘেটে ঘেটে কষ্টিপাথরে যাচাই বাছাই করে অলংকৃত করেছেন রাসুলের প্রিয়তমাদের।
সালাহউদ্দিন জাহাঙ্গীর একজন প্রথিতযশা গল্পকার। কোরান হাদিসের গল্প উনার লেখায় জীবন্ত হয়ে উঠে যার প্রমাণ অতীতে একাধিকার দিয়েছেন। প্রিয়তমা উনার শ্রেষ্ঠ কর্ম। ইতিহাস থেকে পাওয়া তথ্য দিয়েই সাজিয়েছেন প্রিয়তমাকে অথচ দীর্ঘ এই বই পাঠে কখনো মনে হয়নি কোন ইতিহাসের বই পড়ছি। গল্পের ছাচে ফেলে চিত্রিত করা বইটির প্রতিটা লাইন পরের লাইন পড়ায় আগ্রহ জাগিয়ে দেয় ফলে অজান্তেই কখনযে রাসুলের উঠোনে আশ্রয় নেয় পাঠক! চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে উঠে আরবভূমি। এইতো নবীর ঘর, এইতো নবীর প্রিয়তমারা। ছোট ছোট প্রতিটি গল্প, বিবিদের সাথে রাসুলের প্রেমময় আলাপচারীতা, মজাদার মান অভিমান, রাগ অনুরাগ,খুনসুটি, ভালোবাসা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ সব মিলেমিশে একটা মধুময় আবহ তৈরি হতে বাধ্য পাঠকের মনে।
কোন অধ্যায় রেখে কোন অধ্যায় পড়বো! সকলেই প্রিয়তমা! সকলেই নবীর প্রেয়শী। সকলেই আমার শ্রদ্ধাভাজন আম্মিজান রা.।
‘প্রিয়তমা’ ইতিহাস আশ্রিত বই তাই লেখক তার সাধ্যমত প্রতিটা তথ্য বিভিন্ন সোর্স থেকে যাচাই করেছেন। বইয়ের বিষয় বস্তু আর লেখনীর ধারাবাহিতা গতানুগতিক সিরাতের স্টাইল থেকে ভিন্ন হওয়ায় সিরাত ও ভাষা বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় বারবার যাচাই করিয়ে নিশ্চিত হয়েছেন। যে সকল তথ্যে একাধিক মত রয়েছে ও গভীর বিশ্লেষনের দাবী রাখে সেসকল বিষয় সযতনে এড়িয়ে গেছেন।
প্রিয়তমা ছিল লেখকের জন্য একটা ড্রিম প্রজেক্ট! বইয়ের প্রতিটা বিষয়েই আলাদা যত্ন আলাদা ভালোবাসা দিব্যলোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে উঠে। গতানুগতিক প্রচ্ছদকে এড়িয়ে সোনালি মখমলে সবুজ সূতয় লেখকের প্রিয়তমার নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় দীপ্তিময় হয়ে উঠেছে ‘ প্রিয়তমা’ র প্রচ্ছদ। মজবুত বাধাই আর ঝকঝকে ছাপা সব মিলিয়েই ‘প্রিয়তমা’ পাঠকের প্রিয়তমায় পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ।
লেখক দাবী করেছেন যে সকল অর্বাচীন উম্মাহাতুল মুমিনিনদের জড়িয়ে আল্লাহর রাসুলের উপর নানা অপবাদ দেয়, কুৎসা গেয়ে বেড়ায় ‘ প্রিয়তমা ‘ হবে তাদের জন্য উত্তম জবাব।আমি বলব প্রিয়তমা বাংলাভাষী নবী প্রেমীদের জন্য একটা মস্তবড় হাতিয়ার। নিজের চিন্তা চেতনা , অস্পষ্টতা, বিশ্বাস ভালবাসা , জ্ঞান সব কিছুই নতুন করে ঝালিয়ে নিতে পারবে ।
সামাজিক অস্থিরতা আমাদের পারিবারিক জীবনকেও করে তুলেছে এলোমেলো। স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্যকলহ, মানসিক টানাপোড়ন, পরস্পর বিশ্বাসহীনতা, তালাক- ডিভোর্স আর সংসার ভাঙার করুণ সুরে ছেয়ে গেছে চারপাশ। অথচ একটা সুখি পরিবার গঠনের সব উপাদান রয়েছে আল্লাহর রাসুলের দাম্পত্যজীবনে যা কখনো চেখে দেখা হয়নি, গ্রহণ করা হয়নি শিক্ষা। অথচ আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। সুখি সমৃদ্ধ প্রেমময় দাম্পত্যজীবন গড়তে ‘প্রিয়তমা’ টনিক হিসেবে কাজ করবে কেননা এই বই পাঠের পর আপনার মনে অযাচিত কোন প্রশ্নই জাগবেনা।
রেটিং – ৪.৭৫/৫ ( নিয়ম থাকলে ৫ ই দিতাম)
আল্লাহ রাসুলের ‘প্রিয়তমা’দের উপর শান্তি বর্ষিত করুন। আমিন।
আপনার প্রিয়তমা কি এমনই?
হেরা গুহায় জিবরাইল (আ:) তাঁর কাছে প্রথম যেদিন ওহী নিয়ে আসেন এবং তাঁকে বলেন, পড়ো। তিন বললেন, আমি পড়তে জানিনা। ফেরেশতা তাঁকে বুকে জড়িয়ে থরে সজোরে চাপ দিলেন, পড়ো। তিন বলেন, আমার সব শক্তি যেন নিংড়ে নেয়া হলো। এরপর ফেরেশতা তাঁকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, পড়ো। তিনি বললেন, আমি তো পড়তে জানি না। পুনরায় ফেরেশতা আমাকে বুকে জড়িয়ে চাপ দিলেন।
এরপর ছেড়ে দিয়ে বললেন, পড়ো, তৃতীয়বার তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে সজোরে চাপ দিলেন এবং বললেন, পড়ো ইকরা বে-ইসমে রারিব্বকাল্লাযি খালাক। (আল্লামাল ইনসানা মা লাম ইয়ালাম পর্যন্ত নাযিল হয়েছিল। ) অর্থাৎ পড়ো সেই প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন।
এই আয়াতগুলো নাযিল হওয়ার পর প্রিয় নবী ঘরে ফিরে এলেন। তার বুক ধুকধুক করছিল। স্ত্রী হযরত খাদিজা বিনতে খোয়াইলিদকে বললেন, আমাকে চাদর গিয়ে ঢেকে দাও, আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও। বিবি খাদিজা প্রিয় নবীকে চাদর জড়িয়ে শুইয়ে দিলেন। তার ভয় কেটি গেল।
এরপর তার প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজাকে সব কথা খুলে বলেন প্রিয় রসুল বললেন, আমি নিজের জীবনের আশংকা করছি। প্রিয়তমা স্ত্রী তাঁকে অভয় দিয়ে বললেন, আল্লাহ পাক আপনাকে অপমান করবেন না। আপনি আত্মীয় স্বজনের হক আদায় করেন, বিপদগ্রস্ত লেকদের সাহায্য করেন মেহমানদারী করেন, সত্য প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করন।
প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজা এরপর প্রিয় নবীকে তাঁর চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবনে নওফেলের কাছে নিয়ে গেলেন। ওয়ারাকা ইবনে নওফেল ইবনে আবদুল ওযযা আইয়ামে জাহেলিয়াতে ঈসায়ী ধর্ম বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি হিব্রু ভাষায় লিখতে জানতেন। যতোটা আল্লাহ পাক তওফিক দিতেন হিব্রু ভাষায় ততোটা ইঞ্জিল তিনি লিখতেন। সে সময় তিন ছিলেন বয়সের ভোরে ন্যুজ এবং দৃষ্টিহীন। প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজা বললেন, ভাইজান, আপনি আপনার ভাতিজার কথা শুনুন। ওয়ারাকা বললেন, ভাতিজা তুমি কি দেখেছ?
রসূল (সা.) যা যা দেখেছেন সব তাকে খুলে বললেন। সব শুনে ওয়ারাকা বললেন, তিনি সেই দূত যিনি হযরত মুসার (আ) কাছে এসেছিলেন। হায় যদি আমি সেই সময় বেঁচে থাকতাম যখন তোমার কওম তোমাকে দেশ থেকে বের করে দেবে। রসুল অবাক হয়ে বললেন, তবে কি আমার কওম আমাকে সত্যি সত্যিই বের করে দেবে, ওয়ারাকা বললেন, হ্যাঁ তুমি যে ধরনের বাণী লাভ করেছো এ ধরনের বাণী যখনই কেউ পেয়েছে তার সাথে শত্রুতা করা হয়েছে। যদি আমি বেঁচে থাকি তবে অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করবো। এর কিছুকাল পরই ওয়ারাকা ইন্তেকাল করেন। ওয়ারাকা ইবনে নওফেল যা বলেছিলেন কিছুকাল পরে তা ঘটেছিল। সত্যি সত্যিই বের করে দিয়ে ছিলেন আর তার প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজা যতদিন জীবিত ছিলেন তাকে দ্বীনের কাজে সাহায্য করেছেন।