তালনবমী গল্প PDF Download❤️(বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়)
BOOK: Talnabami by Bibhutibhushan Bandyopadhyay pdf | তালনবমী গল্প PDF Download
যশোর স্টিজের শাড়ি পরিহিতা, খোলা চুলের এক মধ্যবয়সী সামনে । কীভাবে শুরু করবো যখন ভাবছি, তখুনি তিনি আমাকে ভেতরে ডেকে নিলেন। আড়ষ্ট পায়ে হেটে সোফায় থিতু হয়ে বসি। তারপর শুরু করি, জি, মা আমাকে ঠিকানা দিয়েছিলেন । আমি, মানে আপনি হয়তো চিনবেন, আমার বাবার নাম সোবহান তরফদার । ইরফান চাচা বাবার খালাতো ভাই । স্পষ্ট লক্ষ্য করি, আমার এই বিবরণে মহিলা ঈষৎ কেঁপে ওঠেন। কিন্তু খানদানি কায়দায় নিজেকে সামলে নেন পরমূহূর্তে এই বলে, আমি চিনেছি। তুমি ঢাকাতেই থাকো বোধ হয়, তেমনই তো শুনেছিলাম …। কৌতুহল অপসারিত হলে অন্য পাশের সোফায় সহজ হয়ে বসেন তিনি। আপনিই বোধহয় কাকিমা এবং পরক্ষণেই চিরকাল যা হয় অস্বস্তির সময় খেই হারিয়ে ফেলা, বলি, আপনি জানেন আমি ঢাকায় থাকি? মানে আপনি আমাকে চেনেন? আশ্চর্য! কী করেঃ প্রশ্নটা করেই বোকার মতো এতোক্ষণ পর উঠে দীড়িয়ে তার পায়ে হাত ছোয়াতে যাই কিন্তু তার তীব্র প্রতিরোধের মুখে তা সম্পন্ন হয় না। আমাকে বাধা দেয়ার সময় তাঁকে দীড়াতে হয়। তেমনি দীড়িয়ে থেকেই তিনি বলেন, তরফদার সাহেবের একজন মেয়ে ঢাকায় থাকে, কে যেন বলেছিল । যা হোক, তুমি একটু বসো, আমি আসছি+আসলে দেখো, যোগাযোগ না থাকলে যা হয়, আত্মীয়তার সম্পর্ক অথচ কেউ কাউকে চিনি না। আমি ফের দীড়াতে যাবো, অমনি-তিনি প্রায় হা-হা করে বলে ওঠেন, বসো বসো।
তারপর আস্তে-ধীরে পা ফেলে তিনি ভেতরে চলে যান। এবার আমি স্বভাব কায়দায় পুরো ঘরটা পর্যবেক্ষণ করে চলি। বাইরের মতোই ঘরের ভেতরটাও জমিদারি কায়দায় বানানো । খাজকাটা দেয়ালের শাদা আস্তর ফ্যাকাশে । বিশাল এই ঘরে একটি মাত্র একশ” পাওয়ারের বান্ধ। ফলে জন্ডিস-আক্রান্ত আলো দৃষ্টিকে পীড়িত করে। দু’সেট ভেলভেটে মোড়ানো সোফা বিশাল আকারের । দেয়ালে অনেক টিকটিকি । ওদের একচ্ছত্র চলাফেরা দেখে মনে হয়, যেন যত্ব করে পোষা । ঘরের পুব কোণে চা গাছের গুঁড়ির ওপর পেতলের বড় ফুলদানি, তাতে প্লাস্টিকের একবীক ফুল ধুলোর আস্তরে ঢাকা। গুচ্ছ পাখাসমেত মৃত বাজপাখি দেয়ালের স্ট্যান্ডে ঝুলছে। এই পাখিটাই ঘরের প্রাটীনতাকে আরো প্রকট করে তুলেছে। কার্পেট দেখে মনে হয়, বাঘের চামড়ার । মেঝের মাঝামাঝি বেছানো। ঘরের গুমোট পরিবেশ এমনই যে, মনে হয়, অনেকদিন দরজা-জানলা খোলা হয় না। ভেন্টিলেটার দিয়ে যেটুকু হাওয়া আসে তাতে করে শ্বাসক্রিয়া স্বচ্ছন্দ হওয়ার সুযোগ পায় না। ঘরের মাঝখানে দীড়িয়ে এইসব দেখছি আর নিজের অযাচিত কাঙালেপনাকে বিন্দু বিন্দু করে আবিফার করছি। যে লোকটিকে এতো ঘৃণা করেছি, প্রতিদিন, আজ তার এখানে আশ্রয়ের জন্য আমাকে আসতে হলো? একটা হিমশাদা তরঙ্গ পায়ের পাতা ফুঁড়ে মাথা অব্দি ছুটে যায়। ইচ্ছে হয়, দৌড়ে বেরিয়ে পড়ি ।
তালনবমী গল্প pdf download পিডিএফ ফাইল সংগ্রহ করুন অথবা অনলাইনে পড়ুন