[PDF] ইতি স্মৃতিগন্ধা Pdf Download by সাদাত হোসাইন
বইয়ের নাম: iti smritigondha pdf by sadat hossen | ইতি স্মৃতিগন্ধা সাদাত হোসাইন Pdf Download
ধামরাইয়ের বংশী নদীর তীরে বিশাল বালুর মাঠ । মাঠে তিল ঠাই নেই। লোকে লোকারণ্য। প্রতিবছরের মতো এ বছরও এখানে মেলা বসেছে-সঙ্গে রথযাত্রা। এবার অনিবার্য কারণে মেলার সময় এগিয়ে আনা হয়েছে। তাতে অবশ্য জৌলুস কিছু কমেনি । বরং বেড়েছে। এবার বৃষ্টির-উৎপাত নেই । জল-কাদা নেই। খটখটে শুকনো চারিদিক। আবহাওয়াও শীত্ল।! ফলে লোক বেড়েছে আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। মাসব্যাপী এই মেলায়’দূর-দূরান্ত থেকেও নানা মানুষজন আসে। এবারও এসেছে। নদীর ঘাট গমগম করছে মাঝি-মাল্লাদের ভিড়ে । অসংখ্য নৌকা, বজরা বাধা ঘাটে । মেলা উপলক্ষে বিশাল বাজার বসেছে চারধারে। সেই বাজারে নানারকম পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছে বৃহত্কষত্র ব্যবসায়ীরা । দল বেঁধে বাউল- সাধকরা এসেছেন। এসেছেন জটাধারী তান্ত্রিক, সাধুর দল। তারা উত্তর দিকে বসেছেন। সেখানেও কৌতুহলী মানুষ । বরিশালের পালরদি থেকে এসেছে দেশ বিখ্যাত লক্ষ্পণ দাশের সার্কাস। ময়মনসিংহ, মানিকগঞ্জ থেকে এসেছে পুতুলনাচ ও যাত্রাপালার দল। চারদিকে যতদূর চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। এই জনসমাগম অবশ্য বাড়তে থাকে দুপুরের পর থেকে । সময় যত গড়ায়, তত বাড়ে। নানা ধরনের লোক আসে এখানে । কুত্তি থেকে শুরু করে শারীরিক কসরত, জাদু, বায়োক্ষোপ দেখানোর লোক যেমন আসে, তেমনি আসে বেদেদের দলও । তারা এসে মাদুর বিছিয়ে বসে । তারপর সাপের খেলা দেখায় । বাত-ব্যথা, যকৃতের পীড়া থেকে শুরু করে নারী-পুরুষের নানা গোপন অসুখ-বিসুখের ওষুধও বিক্রি করে। এদের প্রত্যেককে নিয়েই মানুষের আগ্রহ তুঙ্গে । ফলে চারদিকে তুমুল হুল্লোড়,ভিড়ভাষ্টা, কোলাহল।
এ যেন এক হইহই কাণ্ড, রইরই ব্যাপার! তবে মেলা ঘিরে এবার খানিক শঙ্কার কালো মেঘও জমেছে । এই মেলা মূলত আয়োজন করেন বিভুরঞ্জন রায়। তিনি এ অঞ্চলের বিগত জমিদার মনোহর রঞ্জন রায়ের পৌত্র। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পিতামহের রেখে যাওয়া সেই প্রভাব-প্রতিপত্তি আর তাদের নেই। ক্রমশই খর্ব হয়েছে। স্তিমিত হয়েছে জৌলুস । দেশভাগের সময় বড়সড় ধাক্কা খেয়েছিল রায় পরিবার । তখন তাদের অনেকেই দেশান্তরীও হয়েছিল । কিন্তু সদ্য কৈশোর পেরুনো বিভুরঞ্ন তাতে রাজি হননি। তিনি রয়ে গিয়েছিলেন তার এই বিশাল পৈতৃক ভিটেতেই। খুব যে খারাপ থেকেছেন, তা নয়। কিন্তু হঠাৎ হিসেবে । পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ভয়ানক বৈরিতার স্বীকার হতে হয় তাদের। ফলশ্রুতিতে সাময়িকভাবে দেশ ত্যাগও করতে হয়েছিল তাকে। কিন্তু যুদ্ধের বছরতিনেক পর আবার নিজ দেশে ফিরে এসেছেন তিনি। ইচ্ছে ছিল সবকিছু আবার আগের মতো গুছিয়ে নিয়ে জীকিয়ে বসবেন। কিন্তু ততদিনে তার রেখে যাওয়া ভিটে-মাটি, পাড়া-প্রতিবেশী, চেনা মানুষদের অনেক কিছুই পাল্টে গেছে। আগের অবনত, আন্তরিক মানুষগুলোও এন হয়ে উঠেছে অচেনা, উদ্ধত, অন্য মানুষ। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো।,২ তার রেখে যাওয়া অনেক সম্পত্তিই ততদিনে বেদখল হয়ে গেছে।
এমনকি এই নদীতীরের বিশাল বালুর মাঠও বেহাত হয়েছে। উড়ে এসে জুড়ে বসেছে দুষ্ট কিছু লোক। সেখানে তারা ইটের ভাটা বসিয়েছে। দিনরাত সেই ভাটার গনগনে আগুনে ইট পুড়ছে। সেইসঙ্গে পুড়ছে বিভুরঞ্জনের বুকও। এই দহন থেকে তার মুক্তি মেলে না। প্রতিবছর কী আড়ম্বর করেই না মেলা বসত এখানে । আশপাশের বহু অঞ্চলের মানুষ ছুটে আসত একটু দর্শন, উদযাপনের জন্য । তাদের সকলের সবচেয়ে বড় আনন্দের উৎসব ছিল এই মেলা । ছোট-বড় ব্যবসায়ীদের কাছে বার্ষিক বাণিজ্যের কেন্দ্রস্লও ৷ অনেকের কাছে এ যেন আবার এক তীর্থস্থানও। বছরান্তে এখানে না এলে তাদের আত্মার শান্তিটুকু আর মেলে না। ফলে এই মেলা হয়ে উঠেছিল ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকল মানুষের এক আশ্চর্য মিলনস্থল। অথচ সেখানেই কি না এখন আগুন জ্বলছে দিন-রাত! সেই আগুনে কাঠ পুড়ে কয়লা হচ্ছে, মাটি পুড়ে ইট হচ্ছে আর বিভুরঞ্জনের হৃদয় পুড়ে হচ্ছে খাক। বিভুরঞ্জন অবশ্য দেশে ফিরেই এই জায়গা উদ্ধারের চেষ্টায় নেমে পড়েছিলেন । তা পেরেওছিলেন।
ইতি স্মৃতিগন্ধা Pdf Download by সাদাত হোসাইন link – click here