Bangla Book Pdf Download (All)
চন্দ্রভুক প্রকাশন PDF Download❤️(All)
Chondrovuk Prokashon Pdf Download | বই: চন্দ্রভুক প্রকাশন PDF Download
- লেখক : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
- প্রকাশনী : চন্দ্রভুক প্রকাশন বই পিডিএফ ডাউনলোড
- পৃষ্ঠা : ১২০
- মূল্য : ১৯০ টাকা
- ধরন : রোমাঞ্চকর উপন্যাস
- রিভিউদাতা : জান্নাতুল ফিরদাউস রিনথী
- ব্যক্তিগত রেটিং : ৯/১০
All books link:
আরো দেখুন: বিখ্যাত বই pdf
ভূমিকা:
থাকবো নাকো বদ্ধঘরে,
দেখবো এবার জগৎটাকে৷
কেমন করে ঘুরছে মানুষ,
যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে৷
জগৎকে কাছ থেকে দেখার অদম্য ইচ্ছা ও সাহসের পিঠে এঁকে দেয়া এক নেশার উদ্দীপনা এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য বিষয়৷ বিভূতিভূষণ বন্দ্যাপাধ্যায়ের হৃদয়স্পর্শ করা লেখনশৈলী পাঠককে কম্পিত হস্তে প্রতিটি পৃষ্ঠা বার বার ছুঁয়ে দেখতে বাধ্য করে৷
লেখক পরিচিতি:
জনপ্রিয় ভারতীয় কথা সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১২সেপ্টেম্বর,১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতের উত্তর পরগণায় জন্মগ্রহণ করেন৷ আমাদের বহুসংখ্যক উপন্যাস ও ছোটগল্প উপহার দিয়ে তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন৷ মানবজীবনের আনন্দ,দুঃখ,বাস্তবতার সংমিশ্রণ তাঁর লিখার মাঝে স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে৷তাঁর মনকাড়া উপন্যাসের মাঝে উল্লেখযোগ্য হল: চাঁদের পাহাড়, পথের পাঁচালী, অপরাজিত, আদর্শ হিন্দু হোটেল, ইছামতি প্রভৃতি৷১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি চাঁদের পাহাড় উপন্যাসটি রচনা করেন৷ এই কালজয়ী কথাসাহিত্যিক ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে পরলোক গমন করেন৷
উপন্যাস নামকরণের স্বার্থকতা:
পূর্ব আফ্রিকার কিংবদন্তি পর্বতমালা হল “মাউনটেইনস অফ দ্যা মুন”৷ এখানে দাঁড়িয়ে থাকা পর্বতশৃঙ্গের মাঝে অন্যতম হল “চাঁদের পাহাড়”৷কাঙ্খিত হিরকসন্ধানকেন্দ্রিক এই পাহাড় খুঁজতে যুগে যুগে দুঃসাহসের পরিচয় দিয়েছে বহু যুবক৷কখনো সেখানে না যেয়েই লেখকে সেই স্থানের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বর্ণনা যেন মন কেড়ে নেয়ার মত৷পুরো ঘটনা কেন্দ্র করে বইয়ের নামটি সম্পূর্ণরুপে সার্থক এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ৷
প্রেক্ষাপট:
শত বিপদের মাঝে প্রগাঢ় ইচ্ছেশক্তি ধারণকারী একজন বালক যে হার মানেনি,দমে যায়নি৷তার অসীম সাহসিকতার প্রেরণামূলক গল্প জুড়ে সবটুকু উপন্যাস৷
চরিত্র পরিচিতি:
▪︎শঙ্কর:
উপন্যাসের প্রধান চরিত্র৷অজপাড়া গায়ের শঙ্কর মনে স্বপ্ন বুনেছিল জগৎটাকে কাছ থেকে দেখার৷সেই নেশার জোড়ে সে বেড়িয়ে পড়ে দুঃসাহসিক অভিযানে৷
▪︎ডিয়েগো আলভারেজ:
একজন পর্তুগীজ অভিযাত্রীক৷ শঙ্করের অভিযানের মূল সঙ্গী যার কাছ থেকে শঙ্কর নানা বিষয়ে জ্ঞানার্জন করে৷দুঃসাহসী এই অভিযাত্রীও অতিকায় বুনিপের শিকার হয়ে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন৷
▪︎জিম কার্টার:
একজন ব্রিটিশ অভিযাত্রীক৷ আলভারেজের হিরে খোঁজার একমাত্র সঙ্গী৷ বুনিপের কাছে হার মেনে যে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে বাধ্য হয়েছিল৷
▪︎আত্তিলিও গাত্তি:
একজন ইতালিক অভিযাত্রীক এবং কমান্ডার৷তিনি আফ্রিকার গহীন জঙ্গলে একটি হিরের খনি আবিষ্কার করেন৷ তার অচেনা আগন্তুকের জন্যে লিখা চিঠির মাধ্যমে শঙ্কর হিরের খনির ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা লাভ করেছিল৷
কাহিনী সংক্ষেপণ:
সময়টা ছিল মোটামুটি ১৯০৯খ্রিস্টাব্দ৷ভাতরের একটি অজপাড়া গায়ের ছেলে শঙ্কর যার ছিল অজানাকে জানার প্রচন্ড ইচ্ছা৷তার শিক্ষাগত যোগ্যতাও নিতান্ত কম ছিল না৷তাছাড়া পারিপার্শ্বিক নানা কাজে ছিল তার দক্ষতা৷কিন্তু পারিবারির দিক দিয়ে আর্থিক সংকটের কারণে একটি চাকুরীর সন্ধান তার স্বপ্নগুলো বার বার বাঁধাগ্রস্ত করে৷ অবশেষে চাকুরীর জেড় ধরেই সে পাড়ি জমায়
আফ্রিকার উগান্ডায়৷একটি কন্সট্র্যাকশন কোম্পানীর কেরানীর পদে যুক্ত হয়ে তাকে আশ্রয়গ্রহণ করতে হয় জঙ্গলের তাঁবুতে৷ দিনের পর দিন রহস্যঘেরা জঙ্গলের বিভিন্ন প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয় সে৷ একসময় প্রবল বৃহৎ সিংহকেও সে সামনাসামনি প্রতিহত করে৷
তারপর এই চাকুরী থেকে একটি সবুজে ঘেরা অচীনপুরের জনমানবহীন স্টেশনের মাস্টার হিসেবে যোগদান করে সে৷ সম্পূর্ণ একাকী দুঃসাহসিক জীবনযাপন তার প্রবল সাহস এবং প্রকৃতির প্রতি নেশার প্রমাণ দেয়৷ এমনকি সিহং এবং কালো মাম্বা কে প্রতিহত করেও সে সেখানে অবস্থান করে৷ হঠাৎ পরিচয় হয় দুঃসাহসিক পর্তুগীজ আভিযাত্রীক আলভারেজের সাথে৷তার সাথেই চাঁদের পাহাড়ের হিরক খনির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় সে৷ আলভারেজের মুখে সে জানতে পারে জিম কার্টারের ভয়ঙ্কর অভিযানের গল্প৷ বুনিপ নামক ভয়ঙ্কর জন্তুর হাতে জিম কার্টারের মৃত্যু হওয়ার পর নিঃসঙ্গ অলভারেজ খনির খোঁজে দিগভ্রান্ত
হয়ে ফিরে এসেছিল৷
অরভারেজ ও শঙ্কর প্রকৃতির নেশায় উন্মাদ হয়ে বছরের পর বছর কাটিয়ে দেয় আফ্রিকার সেই জঙ্গলে৷ প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ কোনো বিপদ তাদের আটকে রাখতে পারেনি৷মৃত্যুর মুখ থেকে বার বার ফিরে এসেও অবশেষে অলভারেজের মৃত্যু সেই বুনিপ নামক ভয়ঙ্কর জন্তুর হাতেই হয়৷ শঙ্কর ফিরে আসার চেষ্টা করেও আটকে যায় এক গোলকধাধার গুহায়৷ নিজস্ব বুদ্ধিমত্তায় সেখান থেকে বের হয় সে অবশেষে৷ তারপর সে মরুভূমির একটি গুহায় আত্তিলিও গাত্তি নামক এক সফল হিরকসন্ধানীর কঙ্কাল ও চিঠি পায় যার মৃত্যু তিরিশ বছর পূর্বেই হয়েছিল৷
গাত্তির সংগ্রহ করা পাঁচখন্ড হিরে নিয়ে মুমূর্ষ অবস্থায় শঙ্কর অবশেষে ফিরে আসতে পারে সলসবেরির বুকে৷
তার এই সাহসী অভিযানের মাধ্যমে সে বিখ্যাত হয়ে ওঠে এবং আবারও ফিরে যায় তার গ্রামে মায়ের কোলে৷ এই ফেরাই তার শেষ নয়৷ সেই হিরের খনিকে নিজ হাতে স্পর্শ করার নেশা ও আগ্রহ থেকে যায় তার মনের গভীরে৷
পাঠ প্রতিক্রিয়া ও ভাবাবেগ:
বইটি শুধু আবেগকেই স্পর্শ করেনা নিজের মনকে কল্পনার অনেক উর্ধ্বে নিয়ে যায়৷ বইটি পড়ার সময় মনে হয়েছিল শঙ্করের অভিযানের আমিও একজন সঙ্গী যে শক্ত হাতে প্রতিহত করে চলেছি উর্ধ্বশ্বাসে আসা বিপদকে৷ কখনোবা শিহরিত হয়ে দম বন্ধ হয়ে এসেছে৷ কখনোবা চোখের সামনে ভেসে উঠেছে ভয়ঙ্কর বুনিপের দেহাকৃতি৷
উপন্যাসটির লোমহর্ষক রোমাঞ্চকর ঘটনাগুলো মনে বৃহৎ দাগ কেটেছে এবং কল্পনাকেও বার বার উত্তেজিত করেছে৷
পছন্দের কিছু বাক্য:
▪︎মানুষের আয়ু মানুষের জীবনের ভুল মাপকাঠি৷
▪︎ভয় ও বিপদ মানুষকে সাহসী করে তোলে৷
▪︎কিছুক্ষণ আগের ভয় ও শত্রুতা বেমালুম ভুলে গিয়ে যাদের হাতে অপমানিত হয়েছে তাদেরই সঙ্গে দিলখোলা হেসে খোশগল্প করতে পারে পৃথিবীতে এধরনের লোক বেশি নেই৷
▪︎শঙ্কর ভুলে গেছে চারপাশের সব আসবাবপত্র, আফ্রিকা দেশটা, তার রেলের চাকরি,মোম্বাসা থেকে কিসুমু লাইনটা,তার দেশ,তার বাবামা—সমস্ত জগৎটা শূণ্য হয়ে গিয়ে সামনের ঐ দুটো জ্বলজ্বলে আলোর দানায় পরিণত হয়েছে,তার বাইরে শূণ্য!অন্ধকার!মৃত্যুর মত শূণ্য,প্রলয়ের পরের বিশ্বের মত অন্ধকার৷
বইটির তাৎপর্য(বইটি কেন পড়বেন?):
“চাঁদের পাহাড়”
একটি দূরন্তপণা এবং দুঃসাহসিক লোমহর্ষক উপন্যাস পাঠকের মনকে বার বার স্পর্শ করে যায়৷যারা রোমাঞ্চিত ঘটনা ভালোবাসেন উপন্যাসটি তাদের সহ প্রতিটি পাঠকের মন জয় করার ক্ষমতা রাখে৷
স্বপ্ন বোনার ক্ষমতা সবাই রাখে৷ কিন্তু স্বপ্নের সত্যতায় পৌঁছানোর ধৈর্য এবং সাহসিকতা সবার মাঝে থাকেনা৷উপন্যাসে অভিযাত্রীকদের একনিষ্ঠতা পাঠককে স্বপ্ন অনুসন্ধানের কাছাকাছি পৌঁছানোর উৎসাহ যোগাতে পারে৷
আত্মপ্রত্যয়,ধৈর্য্যধারনের পরও ভাগ্যের কাছে মাথানত করার মানসিতা সৃষ্টি৷
এছাড়াও আফ্রিকার সৌন্দর্য ও গভীরতার বর্ণনা প্রকৃতি পিপাসু পাঠকদের তৃষ্ণা মেটাতে পারে৷
যেকোন বয়সের পাঠকের জন্যে উপযুক্ত একটি বই “চাঁদের পাহাড়” যেখানে নেই কোন অশ্লীলতা অথবা মন্দ অনুপ্রেরণা৷ বইটির স্বার্থকতা এবং জনপ্রিয়তার পেছনে এটি সবচেয়ে বড় যৌক্তিকতা৷যুগ যুগ ধরে এই অনুপ্রেরণাকে সঙ্গী করে অসাধ্যকে সাধন করতে পারে বহু মানুষ৷