Currently set to Index
Currently set to Follow
Bangla Book Pdf Download (All)

বঙ্গবন্ধু সরকারের সফলতা ও ব্যর্থতা ❤️ – বঙ্গবন্ধুর দেশ গঠন

বঙ্গবন্ধু সরকারের সফলতা ও ব্যর্থতা | বঙ্গবন্ধু সরকারের সাফল্য:

স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সরকারের প্রথম মন্ত্রীসভা বৈঠকের মধ্য দিয়ে সূচিত হয়েছিল। একটি রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল পূর্ব পাকিস্তান একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ কালে দেশের ধন-সম্পদ ও জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছিল। সদ্য-স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির পুনর্গঠন গঠন ছিল সরকারের জন্য প্রাগ্রাধিকারমূলক কর্তব্য। এছাড়া একটি প্রাদেশিক সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নীত করার কাজ অবধার্য হয়ে পড়েছিল।

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়লাভের পরে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি খুবই নাজুক ছিল। ১৯৭০-এর বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের ধাক্কা (যাতে প্রায় আড়াই লক্ষ বাঙালির মৃত্যু হয়) কাটিয়ে না উঠতেই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। দেশের অবকাঠামোসমূহের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। এছাড়া যুদ্ধের কারণে দেশটির কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য ও পরিবহন খাতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। নতুন এই দেশের জনঘনত্ব ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উচ্চ ছিল এবং এর সিংহভাগ নাগরিকই ছিল নিরক্ষর, অপ্রশিক্ষিত ও বেকারত্বের শিকার। যুদ্ধের কারণে দেশের আবশ্যকীয় নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যশস্যের ভাণ্ডার প্রায় ফুরিয়ে গিয়েছিল। নবপ্রতিষ্ঠিত দেশে কাজে লাগানোর মতো প্রাকৃতিক সম্পদও ছিল অপ্রতুল। ভারত থেকে প্রত্যাবর্তনকারী প্রায় ১ কোটি শরণার্থীর পুনর্বাসনও ছিল এক বিরাট সমস্যা।[১] এর রকম একটি দেশটির পুনর্গঠন ছিল একটি চ্যালেঞ্জ।

বঙ্গবন্ধু সরকারের সাফল্য

রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তার সাফল্য ছিল আকাশচুম্বী। কিন্তু তাকে হাল ধরতে হয় এমন একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্রের যার অর্থনীতি ছিল সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের হাল ধরতে গিয়ে তিনি দেশি- বিদেশী চক্রান্তকারীদের এবং তার নিজ দলের মধ্যেই গাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা সাম্রাজ্যবাদী চক্রদের ষড়যন্ত্রের শিকার হন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং তার নিজ দলের একাংশের দুর্নীতিও তাকে পদে পদে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছিল। তবুও মাত্র সাড়ে তিন বছরের দেশ পরিচালনায় কিছু কিছু অভাবনীয় সাফল্যের জন্য তিনি চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে তার নাম লেখা থাকবে।
১) শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত উদ্যোগের ফলে ১৯৭২ সালের ১২ই মার্চ ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। অথচ সে সময়ে অনেকেই আশংকা করেছিল যে, ভারতীয় সেনাবাহিনী খুব সহজেই বাংলাদেশ ত্যাগ করবে না।
২) শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র দেড় বছরের মধ্যেই একটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহন করতে সক্ষম হন। ১৯৭৩ সালের ১লা জুলাই থেকে এ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
৩) একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রন করা খুব একটা সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর চীনাপন্থী মুক্তিযোদ্ধারা এবং স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিসমূহ তাদের অস্র-শস্র সরকারের নিকট জমা দেয়নি। ফলে স্বাধীনতার পর পর দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটে। কিন্তু মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সকল মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ১০ দিনের মধ্যে অস্র-শস্র জমা দেয়ার আহ্বান জানান। ফলে অনেকেই অস্রশস্র জমা দেওয়ায় দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি ঘটে।
৪) মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি ধবংস হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু সরকার অতি দ্রুত ভারতসহ বিভিন্ন বন্ধু রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে বিধ্বস্ত ও ধবংস প্রাপ্ত রাস্তাঘাট, সেতু,কালভার্টও বিমান বন্দর পুনরায় নির্মাণ করেন। রাশিয়ার প্রত্যক্ষ সাহায্যে চট্টগ্রাম নৌবন্দরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনি করতিক পুতে রাখা মাইন অপসারন করে এ বন্দরটি পুনপ্রতিষ্ঠা করেন।
৫) স্বাধীনতা লাভের পর মুজিব সরকার একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। সরকারের হাতে কোন দেশীয় ও বৈদেশিক মুদ্রা ছিল না। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল ভীষণ দুর্বল। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শেখ মুজিবের বিপুল পরিচিতি এ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতিকে পুনর্গঠনে বিরাট ভূমিকা রাখে। বিদেশী রাষ্ট্র ও দাতা সংস্থাসমূহ অকৃপণ হাতে বিভিন্ন দ্রব্য সামগ্রী প্রেরন করতে থাকে।
৬) বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭২ সালের ২৫ শে মার্চ পাকিস্তান আমলে প্রতিষ্ঠিত বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান ব্যাংক বীমা প্রভৃতি জাতীয়করণ করেন।
৭) আওয়ামী লীগ সরকার ছিল একটি অসম্প্রদায়িক রাজনৈতিক সংগঠন। ব্যক্তিগতভাবে মুজিব ছিলেন সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরোধি। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষকে মূল্যায়ন করা এবং রাজনৈতিক বক্তব্য রাখাকে তিনি বরাবরই ঘৃণা করতেন। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অবসান ঘটানোর জন্য তিনি রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি সংযোজন করেন যা উন্নত বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই সমাদৃত।
৮) বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকেই বঙ্গবন্ধু জোট নিরপেক্ষ নীতিতে বিশ্বাসী ছিল এবং অকৃত্তিম সমর্থন করেন।
৯) শেখ মুজিবের একটি বড় সাফল্য ছিল সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠান। জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হবার পূর্বেই এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ঘোষণা করে তিনি দেশে ও বিদেশে গনতন্ত্রকামী মানুষের নিকট শ্রদ্ধা অর্জন করেন।
১০) বঙ্গবন্ধু সরকার ১০ মাসের মধ্যে একটি সংবিধান প্রনয়ন করে সারা বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছিল যেখানে পাকিস্তান ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতার পর ৯ বছর পরেও তা করতে পারেনি।
১১) শেখ মুজিব সরকার শিক্ষা সংস্কারের জন্য ড. কুদরত-ই-হুদার নেতৃত্বে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ‘কালা কানুন’ বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বায়ত্ত শাসন প্রদান করেন যার সুফল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনও ভোগ করছে।
১২) বঙ্গবন্ধু সরকার ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করেন। যাদের ১০০ বিঘার বেশী জমি আছে সেই বেশী জমি এবং নতুন জেগে উঠা চর বিনামুল্যে ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়ার বিধান করেন। গ্রাম বাংলার ঋণ জর্জরিত কৃষকদের ঋণ মুক্তির জন্য খাই খালাসী আইন করেন যার ফলে ৭ বছর পরে মূল মালিক মহাজন থেকে তার জমি ফেরত পাবে।
১৩) বঙ্গবন্ধু সরকারই সর্বপ্রথম গ্রাম বাংলায় বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ‘পল্লী বিদুতায়ন বোর্ড' গঠন করেছিল।
১৪) বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ অতি দ্রুত সাফল্য লাভ করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট পর্যন্ত শতাধিক রাষ্ট্র এমনকি পাকিস্তানও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। ভারতের সাথে চুক্তির ফলে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহল বাংলাদেশ লাভ করে এবং ফারাক্কা সমস্যা সমাধানের লক্ষে প্রথমিকভাবে বাংলাদেশ পানি বণ্টন চুক্তি অনুযায়ী ৪৪ হাজার কিউসেক পানি লাভ করে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর বাংলাদেশের কোন সরকারই এতো বেশী পানি আনতে পারেনি।
সুতরাং সন্দেহাতীতভাবে, যুদ্ধ পরবর্তী দেশ গঠনে মুজিব সরকারের সাফল্য ছিল অভাবনীয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠন তার মত মহান ও অবিসংবাদিত নেতা
 ব্যতীত কখনো সম্ভবপর ছিল না। বঙ্গবন্ধুর শাসনামল সল্পকালীন হলেও সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত এবং বিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনে শেখ মুজিবের অবদান ছিল অপরিসীম।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর অবদান

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর অবদান বঙ্গবন্ধু সরকারের উল্লেখযোগ্য কিছু দিক হলো :

মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন : মুক্তি বাহিনীর জওয়ানদের কাজে লাগানোর জন্য বঙ্গবন্ধু ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী, মিলিশিয়া, রিজার্ভ বাহিনী সংগঠনের বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেন। মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিত্সা এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এ ছাড়া দেশ গড়ার বিভিন্ন কাজে যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ প্রদান করেন।

ত্রাণ কার্যক্রম : রিলিফ ও পুনর্বাসনের জন্য বঙ্গবন্ধু দেশের বিভিন্ন স্থানে জনসংখ্যার ভিত্তিতে মঞ্জুরি দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পণ : মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহূত অস্ত্র নিজেদের কাছে না রেখে তা ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সমর্পণের আহ্বান জানান। এতে সব মুক্তিযোদ্ধা সাড়া দিয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্র জমা দেন।

স্বাধীন বাংলার প্রশাসনিক পদক্ষেপ : ঢাকা মুক্ত হওয়ার পর একটা প্রশাসনিক শূন্যতা বিরাজ করছিল রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র। নিরাপত্তার বিষয়টি আরো গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু প্রত্যাবর্তনের পর প্রশাসনকে কর্মোপযোগী করে তোলেন।

ভারতীয় বাহিনীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন : ১২ মার্চ ১৯৭২ ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রত্যাবর্তন করে।

১৯৭২ সালের সংবিধান : ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ যে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, তারই আদর্শ হিসেবে রচিত হলো রক্তে লেখা এক সংবিধান ৪ নভেম্বর ১৯৭২।

সাধারণ নির্বাচন : ১৯৭৩ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা : বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের পর দারিদ্র্যপীড়িত বাংলাদেশের জনগণের দ্রারিদ্র্য দূরীকরণ তথা অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে জাতির জনক প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।

এই পরিকল্পনার লক্ষ্যগুলো ছিল—
ক. মূল লক্ষ্য হলো দারিদ্র্য দূরীকরণ। এ জন্য যারা কর্মহীন বা আংশিক কর্মহীন তাদের সবার কর্মসংস্থানের আয়োজন প্রয়োজন। তা ছাড়া জাতীয় আয় বৃদ্ধির সঙ্গে এই আয় বণ্টনের জন্য যথাযথ আর্থিক ও মুদ্রানীতি প্রণয়ন ত্বরান্বিত হওয়া প্রয়োজন।
খ. জনগণের অত্যাবশ্যক পণ্যের চাহিদা যাতে মেটে সে জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর (খাদ্যদ্রব্য, পোশাক, ভোজ্য তেল, কেরোসিন ও চিনি) উত্পাদন বাড়াতে হবে।
গ. কৃষির প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রযুক্তিগতকাঠামোতে এমনভাবে রূপান্তর সাধন প্রয়োজন, যাতে খাদ্যশস্যের উত্পাদনের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জিত হয়, কৃষিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ে এবং শ্রমশক্তির শহরমুখী অভিবাসন বন্ধ হয়।

পররাষ্ট্রনীতি : বঙ্গবন্ধু পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরী মনোভাব নয়। ’ প্রথম তিন মাসের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন, ফ্রান্সসহ ৬৩টি দেশের স্বীকৃতি লাভ। ৩ মাস ২১ দিনের মধ্যে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তান স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয় দুই বছর দুই মাসের মধ্যে। সর্বমোট ১২১টি দেশ স্বীকৃতি প্রদান করে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন গঠন : ইসলামের যথার্থ শিক্ষা ও মর্মবাণী সঠিকভাবে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচার-প্রসারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ২২ মার্চ প্রতিষ্ঠা করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন। ইসলাম আদর্শের যথাযথ প্রকাশ তথা ইসলামের উদার মানবতাবাদী চেতনা বিকাশের লক্ষ্যে একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠা ছিল জাতির জনকের সুদূরপ্রসারী চিন্তার এক অমিত সম্ভাবনাময় ফসল।

বঙ্গবন্ধুর দেশ গঠন

যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর অবদান:

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পরিচালিত নয় মাস ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের পর সমগ্র বাংলাদেশ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়. প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব এই ধ্বংসযজ্ঞকে “মানব ইতিহাসের জঘন্যতম ধ্বংসযজ্ঞ” উল্লেখ করে ৩০ লাখ মানুষ নিহিত ও ২ লাখ নারীর ধর্ষণ হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে শেখ মুজিব সরকার মাত্র এক বছরের মধ্যে দেশ পুনর্গঠনের জন্য উল্লেখযােগ্য কর্মসূচি হাতে নেয়। প্রশাসনিক ব্যবস্থার পুনর্গঠন, সংবিধান প্রণয়ন, এক কোটি মানুষের পুনর্বাসন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষা ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে এবং মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত নামমাত্র মূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠন, ১১,০০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ ৪০,০০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ, দুঃস্থ মহিলাদের কল্যাণের জন্য নারী পুনর্বাসন সংস্থা, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মুক্তিযােদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন, ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ, বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে কৃষকদের মধ্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ, পাকিস্তানিদের পরিত্যক্ত ব্যাংক, বীমা ও ৫৮০টি শিল্প ইউনিটের জাতীয়করণ ও চালু করার মাধ্যমে হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারীর কর্মসংস্থান, ঘোড়াশাল সার কারখানা, আশুগঞ্জ সার কারখানা কমপ্লেক্সের প্রাথমিক কাজ ও অন্যান্য নতুন শিল্প স্থাপন, বন্ধ শিল্প-কারখানা চালুকরণসহ অন্যান্য সমস্যার মোকাবেলা করে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্থনৈতিক অবকাঠামো তৈরি করে দেশকে ধীরে ধীরে একটি সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রয়াস চালানো হয়। শেখ মুজিব পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে আঁতাতের অভিযোগে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব-নিষিদ্ধ ইসলামিক ফাউন্ডেশন পুনরায় চালু করেন।

 ইসলামি গোত্রগুলোর জোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মদ তৈরি ও বিপণন এবং জুয়া খেলা নিষিদ্ধ করা হয়। অত্যন্ত অল্প সময়ে প্রায় সব রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায় ও জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ ছিল বঙ্গবন্ধু সরকারের উল্লেখযােগ্য সাফল্য। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়া হয়। ১০০ বিঘার বেশি জমির মালিকদের জমি এবং নতুন চর বিনামূল্যে ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বন্টন করা হয়। গ্রাম বাংলার ঋণে জর্জরিত কৃষকদের মুক্তির জন্য তিনি “খাই-খালাসী আইন” পাশ করানো হয়। গ্রামবাংলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ও শিল্প-কৃষি উৎপাদনের জন্য পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বাের্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু সরকার স্থানীয় সরকারগুলোতে গণতন্ত্রায়নের সূচনা করে। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভায় গণভােটের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়; এর ফলে প্রশাসনে জনগণ অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করে। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি নাগাদ ১৩ মাসে ১০ কোটি টাকা তাকাবি ঋণ বণ্টন, ৫ কোটি টাকার সমবায় ঋণ প্রদান, কৃষিক্ষেত্রে আমুল পরিবর্তন, ১০ লাখ বসতবাড়ি নির্মাণ, চীনের কয়েক দফা ভেটো সত্ত্বেও জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ, ৩০ কোটি টাকার রিলিফ বিতরণ, ২ ফেব্রুয়ারি থেকে মিত্রবাহিনীর সৈন্য প্রত্যাবর্তন শুরুসহ দেশের সাধারণ মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে শেখ মুজিব সরকার বিশাল কর্মযজ্ঞের আয়ােজন করেন। শেখ মুজিব শতাধিক পরিত্যক্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও কোম্পানি রাষ্ট্রীয়করণ করেন এবং ভূমি ও মূলধন বাজেয়াপ্ত করে ভূমি পুনর্বণ্টনের মাধ্যমে কৃষকদের সাহায্যের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী প্রায় ১ কোটি শরণার্থীর পুনর্বাসনের জন্য বড় পদক্ষেপ নেয়া হয়। এর ফলে অর্থনৈতিক সঙ্কট অবসান হতে শুরু করে এবং সমূহ দুর্ভিক্ষ এড়ানো সম্ভব হয়। এছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, খাদ্য, স্বাস্থ্য, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি ঘটানো হয়। শেখ মুজিবের নির্দেশে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ২১ জুন সকল মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করে পূর্বের ১৯টি জেলার স্থলে ৬১টি জেলা সৃষ্টি করা হয়। ১৬ জুলাই শেখ মুজিব ৬১ জেলার প্রতিটির জন্য একজন করে গভর্নর নিয়োগ দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button