Bangla Book Pdf Download (All)
পথের পাঁচালী উপন্যাস pdf ডাউনলোড
পথের পাঁচালী
—– বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
কোনো একটা বইয়ে পড়েছিলাম, “বাংলা সাহিত্যে তিনজন বন্দ্যোপাধ্যায়(বিভূতিভূষণ, তারাশঙ্কর ও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়), দুইজন চট্টোপাধ্যায়(বঙ্কিমচন্দ্র ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) আর একজন ঠাকুর(রবীন্দ্রনাথ) আছেন।” লাইনটা থেকেই অনুধাবন করা যায় বাংলা সাহিত্যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান কতখানি!
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৯৪ সালের ১২’ই সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার মুরারিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পেশাজীবনে নিজেকে লেখক হিসেবেই নিযুক্ত করেন। যদিও তিনি ছোটগল্প, ভ্রমণসাহিত্য লিখেছেন কিন্তু ঔপন্যাসিক হিসেবেই তিনি বেশী খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর উপন্যাসের উপজীব্য বিষয় ছিল প্রকৃতি ও দরিদ্র মানুষের জীবন। তিনি তাঁর রচনায় অখণ্ড ও অবিচ্ছিন্ন সত্তায় ধারণ করেছেন প্রকৃতি ও মানবজীবনকে। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘পথের পাঁচালী’, ‘অপরাজিত’, ‘আরণ্যক’, ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’, ‘ইছামতী’ ও ‘চাঁদের পাহাড়’। এদের মধ্যে ‘পথের পাঁচালী’ ও ‘অপরাজিত’ তাঁর সবচেয়ে বেশি পরিচিত উপন্যাস। এই ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসকে অবলম্বন করে সত্যজিৎ রায় নির্মাণ করে তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালী’। এ উপন্যাসে একটি শিশুর চৈতন্যের জাগরণ, মানুষ ও প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয়ের বিষয়বস্তুটি প্রকাশ পেয়েছে। এটি ‘বিচিত্রা’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়। গ্রামীন পল্লীসমাজের নিখাঁদ নির্যাস দিয়ে খুব যত্নসহকারে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় উপন্যাসটির প্রতিটা ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন। সমগ্র উপন্যাসটি তিনটি খণ্ড ও মোট পঁয়ত্রিশটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত। খণ্ড তিনটি যথাক্রমে ‘বল্লালী বালাই’ (পরিচ্ছেদ ১-৬; ইন্দির ঠাকরূনের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে), ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ (পরিচ্ছেদ ৭-২৯; অপু-দুর্গার একসাথে বেড়ে ওঠা, দুটি চঞ্চল বালক-বালিকার শৈশব, দুর্গার মৃত্যু, অপুর সপরিবারে কাশীযাত্রা চিত্রিত হয়েছে) এবং ‘অক্রূর সংবাদ’ (পরিচ্ছেদ ৩০-৩৫; অপুদের কাশীজীবন, হরিহরের মৃত্যু, সর্বজয়ার কাজের জন্য কাশীত্যাগ এবং পরিশেষে আবার নিশ্চিন্দিপুর গ্রামে ফিরে আসার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে)। নিচে সংক্ষেপে কাহিনীটা বর্ণিত আছে……..
class="o9v6fnle cxmmr5t8 oygrvhab hcukyx3x c1et5uql ii04i59q">
হরিহর এক গরীব ব্রাহ্মণ, গেরস্তের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁর এক ছেলে আর এক মেয়ে। মেয়েটি বড়, তাঁর নাম দূর্গা আর ছেলেটি ছোট, তাঁর নাম অপু। দু’জন দুজনকে প্রচন্ড রকম ভালোবাসে। তাঁদের দু’ভাইবোনের খুনসুটির মধ্য দিয়ে উপন্যাসের প্লটগুলো এগিয়ে যায়। অপুর পিসি, ইন্দির ঠাকরুনও তাঁদের সাথে থাকে। কিন্তু ইন্দির ঠাকরুনকে অপুর মায়ের সহ্য হত না তাই দেখা যেন প্রায়ই ঝগড়াঝাঁটি করে সে(ইন্দির ঠাকরুন) তাঁর তল্পিতল্পা গুটিয়ে রাগ করে চলে যেত কিন্তু কিছুদিন পরে আবার ফিরেও আসত। উপন্যাসে তাঁর মৃত্যুর দৃশ্যটা খুবই মর্মান্তিক…। এখানে প্রথম ভাগটি শেষ হয়।
এর পরই ‘আম আঁটির ভেঁপু’ গল্পের সূচনা। এ পর্বে অপু ও দূর্গার নানামুখী কাজকর্ম, খুনসুটি, ফল টোকানো, পালিয়ে রেল দেখতে যাওয়া, দূর্গার হাত-টানের অভ্যাস এসব কর্মকান্ডই ফুটে উঠেছে। যদিও ভিক্ষা করে হরিহর তাঁর সংসার চালাতো কিন্তু কিন্তু একটা পর্যায়ে সংসারে নেমে আসে দারিদ্র্যের কালো ছায়া৷ হরিহর উপার্জনের জন্য বাইরে গিয়ে আর ফিরে আসে না৷ অনেক দুঃখকষ্টে দিনাতিপাত করতে থাকে তাঁরা। সংসারের অবস্থা প্রায় নাজেহাল। এসময়ে আবার দূর্গার ম্যালেরিয়া হয় এবং এক ঝঞ্ঝাপূর্ণ রাতে দূর্গার মৃত্যু হয়। এটাই এই উপন্যাসের সবথেকে করুণ চিত্র । এরপরের পর্বটা ‘অক্রূর সংবাদ’। এ পর্বে দেখা যায় অপুরা নিশ্চিন্তিপুরের গ্রাম ছেড়ে কাশী চলে যায় ভাগ্য পরিবর্তনের আশায়। কিন্তু সেখানেও তাদের উপর নেমে আসে নিদারুণ কষ্ট। মনে হয় হতাশা যেন চিরটাকাল তাদেরকে হাতছানি দিয়ে ডেকেই যাচ্ছে। কাশীতে অপুরা কিছুকাল একটু খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকলেও হরিহরের মৃত্যুর পর অপুর মা যেন চোখে সরষেফুল দেখে। সে বুঝতে পারেনা কি করবে। তার উপর আবার এক কুচক্রীর খারাপ নজর পড়ে তাঁর উপর। অনেক কষ্ট অপুর মা (সর্বজয়া) একটা কাজ জোগাড় করে। কিন্তু দিনরাত খাটুনির পরেও ঠিকমতো খেতে পর্যন্ত পায়না তাঁরা। একদিন আবার বাড়ির ছেলেমেয়েদের সাথে মেলামেশার অপরাধে অপুকে প্রচন্ড মারধোর করে বাড়ির কর্তারা। অবশেষে সর্বজয়া তার ছেলেকে নিয়ে আবার নিশ্চিন্তিপুরের দিকে রওয়ানা হয় একটু ঠাই পাবার আশায়…….. এখানেই উপন্যাসটা শেষ হয়।
★★কিছু কিছু লাইন পড়বার সময় মনে হয়েছে নিজেই উপন্যাসের একটা চরিত্র। প্রতিটা লাইন যেন গেঁথে আছে মনের চিত্রপটে!!
১. জীবনে এই প্রথম বাধাহীন, গণ্ডিহীন মুক্তির উল্লাসে তাহাদের তাজা তরুণ রক্ত তখন মাতিয়া উঠিয়াছিল-পরে কি হইবে, তাহা ভাবিবার অবসর কোথায়?
২. দুজনে মিলিয়া নোনাপাতার পান, মোট আলু, ফলের আলু, রাধালতা ফুলের মাছ, তেলাকুচির পটল, চিচ্চিড়ের বরবটি, মাটির ঢেলার সৈন্ধব লবণ-আরও কত কি সংগ্ৰহ করিয়া আসিয়া দোকান সাজাইতে বড় বেলা করিয়া ফেলিল। অপু বলিল-চিনি কিসের করবি রে দিদি?
দুৰ্গা বলিল-বাঁশতলার পথে সেই টিবিটায় ভালো বালি আছে-মা চাল-ভাজা ভাজাবার জন্যে আনে! সেই বালি চল আনি গো-সাদা চক চক করচে-ঠিক একেবারে চিনি–
৩. জীবন বড় মধুময় শুধু এইজন্য যে, এই মাধুর্যের অনেকটাই স্বপ্ন ও কল্পনা দিয়া গড়া।
৪. এই অল্প বয়সেই তাহার মনে বাংলার মাঠ, নদী, নিরালা বনপ্রান্তরের সুমুখ জ্যোৎস্না রাত্রির যে মায়ারূপ অঙ্কিত হইয়া গিয়াছিল, তাহার উত্তরকালের শিল্পীজীবনের কল্পনামুহুর্তগুলি মাধুর্যে ও প্রেরণায় ভরিয়া তুলিবার তাহ্যাঁই ছিল শ্রেষ্ঠ উপাদান।
৫. করুণা ভালোবাসার সবচেয়ে মূল্যবান মশলা, তার গাঁথুনি বড় পাকা হয়।
৬. বালকের প্রাণে সময়ে সময়ে বয়স্ক লোকের উপর স্থায়ী সত্যিকার মেহ আসে। দুর্লভ বলিয়াই তাহা বড় মূল্যবান।
৭. কাল, মহাকাল, সবারই মধ্যে পরিবর্তন আনিয়া দিবে:”তােমার বিচারের অধিকার কি?
উপন্যাসের মধ্যে অনেক নস্টালজিক ঘটনা আছে,
অনেক theme আছে। শত ঝঞ্ঝা সহ্য করে কীভাবে একটি দরিদ্র যজমান পরিবারের বেঁচে থাকে সেই লড়াই। উপন্যাসটিতে বিধবাদের প্রতি অনাচার-অবহেলা, গ্রামের যজমানি প্রথার ক্রূরতা, অসহায়ত্বের যাতনা, কুটিলতা, গ্রামীণ মানুষের অকৃত্রিম সরলতা, ক্ষুদ্র হতে বৃহৎ কপটতা(দূর্গার হাতটানের প্রবৃত্তি), সীমাহীন দরদ আবার কঠোর হৃদয়হীনতা(মেঝ ঠাকরুনের সাথে অপুর আত্মিক সম্পর্ক কিন্তু শেষে তাড়িয়ে দেয়া), কখনো সৃষ্টিছাড়া উল্লাস, কোথাও আবেগী সম্প্রকাশ, পল্লীর মেঠোপথের বর্ণনা, দরিদ্রতার কষাঘাতে নিষ্পেষিত হওয়া একটি পরিবারের ছেলেমেয়েদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন, এক মায়ের তার সন্তানের প্রতি মমত্ববোধ ইত্যাদি ইত্যাদি। মোটকথা পুরো উপন্যাস জুড়েই অসামান্যভাবে প্রকৃতির সাথে মানব হৃদয়ের যে মেলবন্ধন তারই প্রতিচিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ইংরেজ কবি Wordsworth এর মতো করে বলতে হয়,
“When like a roe
I bounded o’er the mountains, by the sides
Of the deep rivers, and the lonely streams,
Wherever nature led.. To me was all in all”.
সংক্ষিপ্তভাবে বলতে চেয়েছি কিন্তু হয়তো কিছু কিছু ভুল আছে। তার জন্য দুঃখিত। অসামান্য একটা অনুভূতি ছিল উপন্যাসটা পড়বার সময়। আমার মত যাদের বাড়ি গ্রামে তারা এটাকে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পারবেন। কয়েকটা কাহিনি একেবারে বাস্তবতার সাথে ঠুকে দেয়া হয়েছে। যারা পড়েন নি তারা অবশ্যই পড়বেন উপন্যাসটা।
বইয়ের নামঃ– পথের পাঁচালী
লেখকঃ– বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
বইয়ের ধরনঃ– উপন্যাস
প্রকাশনীঃ– বর্নবিন্যাস প্রকাশন
প্রকাশকালঃ– ফেব্রুয়ারি ২০১৬
প্রচ্ছদঃ– রাহুল ব্যানার্জী
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ– ১৭৫ পৃষ্ঠা
মূল্যঃ– ৩০০/=