বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা Pdf Download [৮০০ শব্দ]
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচনা প্রতিযোগিতা ২০২২ (Bangabandhu’s childhood essay 800 words pdf):- বঙ্গবন্ধুর শিশুকাল রচনা ৫০০-৮০০-১০০০ শব্দ pdf | বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা pdf | বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচনা pdf download | বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা pdf download | বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা রচনা pdf | বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা pdf | কারাগারের রোজনামচা pdf | বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সমগ্র pdf | বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী pdf download
রচনা : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান PDF
ভূমিকা : “ পরাজিত শক্তি যখন হেঁটে বেড়ায় বিজয়ীর. বেশে , যখন ফুলেরা কাঁদে , হায়েনারা হাসে ; যখন মানুষ ঘুমায় , পশুরা জাগে ; তখন আমার ঠিকানায় আসে সেই পুরনাে পত্র , তখন আমার কানে ভাসে সেই পুরনাে ছত্র— এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম ! এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার.. সংগ্রাম ! জয় বাংলা ! ”কবি শামসুর রাহমানের ভাষায় বলতে গেলে ঠিক এমনই- বাঙালি জাতি যখনই সংকটাপন্ন হয় তখন যে ছয় কানে ভাসে আর সেই ছত্রের সাথে যে নাম আমাদের স্মরণে আসে তা হলাে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । আমাদের এই দেশ , এই জাতির অস্তিত্বই পৃথিবীর বুকে গর্বভরে উচ্চারিত হতাে না যদি এই নামটি না থাকত । বাংলার মাটি যে বাঙালি অমর নেতার জন্মে ধন্য হয়েছে , তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নামটি উচ্চারণ করতে গেলেই যে শব্দ দুটি প্রথমে উচ্চারণ করতে হয় তা হলাে জাতির জনক ’ ও ‘ বঙ্গবন্ধু ‘ । মূলত এই দুটি শব্দ দিয়েই তার পরিচয় । অবদান , আমাদের সামনে উঠে আসে । বিশ্বে যে সকল দেশ স্বাধীন হয়েছে তার কিছু কিছু দেশে স্বাধীনতার জন্য এক একজন মহীরূহ সদৃশ দেশনেতা অবদান রেখেছেন । বিশ্ব ইতিহাসের এই মহান ব্যক্তিদেরই একজন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । যিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন বাঙালি জাতির এক মহাসন্ধিক্ষণে । এই মহান ব্যক্তির নেতৃত্ব লাভ করে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেছিল বাঙালি জাতি । তাঁর উদাত্ত আহ্বানেই বাঙালি অংশ নেয় গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে অর্জন করে বহু প্রত্যাশিত স্বাধীনতা ।
ব্যক্তিগত পরিচয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গােপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯২০ সালের ১৭ ই মার্চ জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান ও মাতার নাম সায়েরা খাতুন । ছয় ভাইবােনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন । তৃতীয় । বাবা – মা ডাকতেন ‘ খােকা ‘ বলে ।
শিক্ষাজীবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : সাত বছর বয়সে টুঙ্গিপাড়া গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষাজীবন শুরু হয় । নয় বছর বয়সে গােপালগঞ্জ পাবলিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন । পরে তিনি স্থানীয় মিশন হাইস্কুলে ভর্তি হন । ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে গােপালগঞ্জ মিশন হাইস্কুল থেকে এন্ট্রান্স ( এসএসসি ) পাস করেন । তারপর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তি হন । ১৯৪৭ সালে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাস করেন । এরপর তিনি সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন । কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তার আর পড়া হয়ে ওঠেনি ।
বৈবাহিক জীবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেগম ফজিলাতুন্নেসার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন । তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা । তিন পুত্র শেখ কামাল , শেখ জামাল ও শেখ রাসেল ।
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও আন্দোলন : ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন । তিনি নিখিল ভারত মুসলিম ফেডারেশনে যােগ দেন এবং এক বছরের মধ্যে বেঙ্গল মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন । সে বছরই তিনি গােপালগঞ্জ ডিফেন্স কমিটির সেক্রেটারি হন । এভাবে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন । ১৯৪৮ সালে তিনি মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন । ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল কায়েদ – ই – আযম মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘােষণা দিলে বজাবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ছাত্রসমাজ তীব্র প্রতিবাদের ঝড় তােলে । ফলে তাকে দু’বছর জেলে থাকতে হয় । জেলখানায় থেকেই ভাষা আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘােষণা করেন ও উৎসাহ দেন । ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হলে শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্মসম্পাদক নির্বাচিত পাকিস্তান সরকারের দুইবার মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হলে শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন । ১৯৫৯ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও তাকে গৃহবন্দি করে রাখা । হয় । ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ছয়দফা কর্মসূচি পেশ করেন । ১৯৬৯ সালে মিথ্যা আগরতলা ষড়যন্ত্র । মামলার মাধ্যমে পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে বিচারের নামে প্রহসন করতে থাকে । তখন সারা বাংলায় ছাত্র – জনতার তীব্র গণ – অভ্যুত্থানের কারণে সরকার তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় এবং ১৯৬৯ । সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারি ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক আয়ােজিত রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ মানুষের নাগরিক সংবর্ধনায় শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘ বঙ্গবন্ধু ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয় । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান : ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে । কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয় বরং পাকিস্তান সরকার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় । ১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চ তিনি রেসকোর্স ময়দান- বর্তমান সােহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে ভাষণ দেন তাতেই বাংলার মানুষ দেশের স্বাধীনতার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে । তাঁর একটি ডাকে দেশের মানুষ পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে । আর সেটি ছিল স্বাধীনতার ডাক । পাকিস্তানি সরকারের কাছে গ্রেফতারের পূর্বে ২৬ শে মার্চ প্রথম প্রহরে তিনি স্বাধীনতার ডাক দেন । তার এই ডাকেই বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন দেশ অর্জন করে । ১৯৭১ সালের ১৭ ই এপ্রিল মুজিবনগরে । বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয় । এই সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । মুক্তিযুদ্ধের পর মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ ই জানুয়ারি তিনি বাংলার মাটিতে পা রাখেন । বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে অসামান্য অবদানের জন্য তাঁকে জাতির জনক ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয় ।
স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : লন্ডন থেকে প্রকাশিত দৈনিক গার্ডিয়ান পত্রিকার ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারির সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছিল— “ শেখ মুজিব ঢাকা বিমানবন্দরে পদার্পণ করামাত্র নতুন প্রজাতন্ত্র এক সুদৃঢ় বাস্তবতা লাভ করে । ” স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে প্রথম সরকারের মাত্র সাড়ে তিন বছরের সংক্ষিপ্ত সময়টুকু নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর ব্লহমান । যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশে তাঁর সরকারকে অগণিত সমস্যা মােকাবিলা করতে হয়েছিল । বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ সকল ক্ষেত্রে রাষ্ট্র এবং জাতিগঠনে কার্যক্রম শুরু হয় । আইন – শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা , অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলাে লক্ষ লক্ষ ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য খাদ্য সংগ্রহ করা । স্বাধীনতার তিন মাসের মধ্যে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা হয় । পনেরাে মাসের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । একশত চল্লিশটি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় । বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির পথ নির্দেশনা নির্ধারণ করেন , “ সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারাে প্রতি বিদ্বেষ নয় । ” বস্তুত মুজিব সরকারই গুরুত্বপূর্ণ সকল ক্ষেত্রে মৌলিক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলাের সূচনা করেন ।
আদর্শ ও দেশপ্রেমের প্রতিকৃতি : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবনের স্বপ্ন ছিল বাংলার স্বাধীনতা ও বাঙালি জাতিসত্তার প্রতিষ্ঠা । শৈশব – কৈশাের থেকে তিনি এই আদর্শ নিয়েই বড় হয়েছেন । এক অদ্ভুত চারিত্রিক দৃঢ়তার অধিকারী ছিলেন তিনি । তার এই চারিত্রিক দৃঢ়তার পেছনে ছিল গভীর অধ্যয়ন , জানা চেনা – শােনা ও দেখার গভীর অন্তর্দৃষ্টি । তার ছিল মানুষকে ভালােবাসা ও সাহায্য করার জন্য দরদি মন । মানুষের দুঃখ তাকে চিন্তাক্লিষ্ট করে তুলতাে , তাকে আবেগতাড়িত করত । আর সেজন্যই বাঙালি জাতির ভাগ্যকে জয় করতে গিয়ে তিনি নিজের জীবনের প্রতি তাকিয়ে দেখার সুযােগ পাননি । দেশেরে জন্য জেল 1 জুলুম , রাজনৈতিক ষড়যন্ত , শাসকগােষ্ঠীর অত্যাচার সবকিছু সহ্য করেছেন । কিন্তু বাংলার মানুষের সাথে কখনাে । বিশ্বাসঘাতকতা করেননি । তার লক্ষ্য ছিল বাংলার মানুষের মুক্তি । একজন মহান নেতা হবার সবকটি গুণই । আমরা তাঁর মধ্যে খুঁজে পাই ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু ও বাংলাদেশের কালাে অধ্যায় : স্বাধীন বাংলাদেশে পথভ্রষ্ট কিছু সংখ্যক সামরিক আমলা , ক্ষমতালােভী দেশবিরােধীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করে । এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে কালাে অধ্যায়ের সূচনা হয় । বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড কেবল ব্যক্তি শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা নয় , বরং এটি ছিল একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড । এই অবিসংবাদিত নেতাকে যে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিল , এটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালাে অধ্যায় । কবির ভাষায়— “ আমরা বাহান্নতে মরেছি দলে দলে , আমরা একাত্তরে মরেছি ঝাঁকে ঝাঁকে , আমরা পঁচাত্তরে মরেছি সপরিবারে । ”
উপসংহার : হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের স্থপতি বাঙালি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান । এই মহান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে প্রখ্যাত সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায়ের যথার্থ উচ্চারণ : “ যতদিন রবে পদ্মা – মেঘনা / গৌরী – যমুনা বহমান ততদিন রবে কীর্তি তােমার / শেখ মুজিবুর রহমান । ” তাঁর কীর্তি ও অবদান বলে শেষ করার নয় । তার নাম বাংলার মাটিতে , বাংলার কথায় , বাঙালির জাতি স্বভায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে আজীবন ।
↬ বিশ্বসম্মোহনী নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমার
↬ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি
বঙ্গবন্ধুর শিশুকাল রচনা ৫০০-৮০০-১০০০ শব্দ pdf
শিক্ষাজীবন : ১৯২৭ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বয়স ৭ বছর তখন তাঁকে স্থানীয় গিমাডাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। তারপর ৯ বছর বয়সে অথাৎ ১৯২৯ সালে তাঁকে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি করা হয়। পরে তিনি মিশনারি স্কুলে পড়ালেখা করেন। কিন্তু ১৯৩৪ সালে তিনি বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হলে প্রায় ৪ বছরকাল তাঁর পড়ালেখা বন্ধ থাকে। অতঃপর ১৯৩৭ সালে আবারও তিনি মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন। এ স্কুল থেকেই তিনি ১৯৪২ সালে এন্ট্রান্স বা প্রবেশিকা পরীক্ষা পাস করেন। এ পরীক্ষা পাস করে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন এবং বেকার হোস্টেলে বসবাস শুরু করেন। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে তিনি ১৯৪৪ সালে আইএ এবং ১৯৪৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থন ও নেতৃত্বদানকে কেন্দ্র করে বৈরী অবস্থার সৃষ্টি হলে আইন বিভাগে অধ্যয়নরত অবস্থাতেই তাঁর ছাত্রজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে।
রাজনৈতিক জীবনের শুরু ও বিশেষ বিশেষ অবদান : ছাত্রাবস্থা থেকেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে। আর তাঁর রাজনৈতিক জীবনে রয়েছে বিশেষ বিশেষ অবদান।
গ্রেনেড তবা বোমায়।
বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা রচনা pdf
আমার আব্বার শৈশব কেটেছিল টুঙ্গিপাড়ার নদীতে ঝাঁপ দিয়ে, মেঠো পথের ধুলোবালি মেখে। বর্ষার কাদাপানিতে ভিজে।
ছোট সময়ে আমি খুব দুষ্ট প্রকৃতির ছিলাম। খেলাধুলা করতাম, গান গাইতাম এবং খুব ভাল ব্রতচারী করতে পারতাম।
আমার যখন বিবাহ হয় তখন আমার বয়স বার তেরো বছর হতে পারে। আমি শুনলাম আমার বিবাহ হয়েছে, তখন কিছুই বুঝতাম না। রেণুর বয়স তখন বোধহয় তিন বছর হবে।
আমার আব্বার পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতি দারুন ঝোঁক ছিল। বিশেষ করে ফুটবল খেলা খুব পছন্দ করতেন। মধুমতি নদী পার হয়ে চিতলমারী ও মোল্লাহাট যেতেন খেলতে। এদিকে আমার দাদাও খেলতে পছন্দ করতেন।
১৯৩৪ সালে যখন আমি ৭ম শ্রেনীতে পড়ি তখন ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। হঠাৎ বেরিবোরি রোগে আক্রান্ত হয়ে আমার হার্ট দুর্বল হয়ে পড়ে। আব্বা আমাকে নিয়ে কলকাতায় চিকিৎসা করাতে যান। কলকাতার বড় বড় ডাক্তার শিবপদ ভট্টাপার্য, এ.কে. রায় চৌধুরী আরও অনেককেই দেখান এবং চিকিৎসা করাতে থাকেন।
১৯৩৬ সালে আবার আমার চক্ষু খারাপ হয়ে পড়ে। গ্লুকোমা নামে একটা রোগ হয়। ডাক্তারদের পরামর্শে আব্বা আবার আমাকে নিয়ে কলকাতায় রওনা হলেন চিকিৎসার জন্য। ডাক্তার সাহেব আমার চক্ষু অপরেশন করাতে বললেন। অপরেশন করা হলো। আমি ভাল হলাম। তবে কিছুদিন পড়াশুনা বন্ধ রাখতে হবে, চশমা পরতে হবে। তাই ১৯৩৬ সাল খেকেই চশমা পরছি।
স্কুলে পড়তে পড়তে আব্বার বেরিবেরি রোগ হয় এবং চোখ খারাপ হয়ে যায়। ফলে চার বছর লেখাপড়া বন্ধ থাকে। তিনি সুস্থ হবার পর পুনরায় স্কুলে ভর্তি হন।
মাস্টার সাহেব গোপালগঞ্জে একটা ‘মুসলিম সেবা সমিতি’ গঠন করেন, যার দ্বারা গরিব ছেলেদের সাহায্য করতেন। মুষ্টি ভিক্ষার চাল উঠাতেন প্রত্যেক মুসলমানের বাড়ি থেকে। প্রত্যেক রবিবার আমরা থলি নিয়ে বাড়ি বাড়ি থেকে চাউল উঠিয়ে আনতাম এবং এই চাউল বিক্রি করে তিনি গরিব ছেলেদের বই এবং পরীক্ষার অন্যান্য খরচ দিতেন।
দাদির কাছে শুনেছি আব্বার জন্য মাসে কয়েকটা ছাতা কিনতে হতো কারণ আর কিছুই নয়। কোন ছেলে গরিব,ছাতা কিনতে পারে না, দূরের পথ রোদ বৃষ্টিতে কষ্ট হবে দেখে, তাদের ছাতা দিয়ে দিতেন। এমনকি পড়ার বইও মাঝে মাঝে দিয়ে আসতেন।
কৈশরেই তিনি খুব অধিকার সচেতন ছিলেন। একবার যুক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা গোপালগঞ্জে সফরে যান এবং স্কুল পরিদর্শন করেন। সেই সময় সাহসী কিশোর শেখ মুজিব তাঁর কাছে স্কুলঘরে বর্ষার পানি পড়ার অভিযোগ তুলে ধরেন এবং মেরামত করার অঙ্গীকার আদায় করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
গোপালগঞ্জ স্কুল খেকে ম্যাট্টিক পাস করে তিনি কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে পড়তে যান। তখন বেকার হোস্টেলে থাকতেন। এই সময় তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সংস্পর্শে আসেন। হলওয়ে মনুমেন্ট আন্দলনে জড়িয়ে পড়েন সক্রিয়ভাবে। এই সময় থেকেই তাঁর রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ শুরু হয়।
এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই বঙ্গবন্ধু প্রথম পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া পূরণের জন্য পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা লগ্নে।
১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারী তারিখে ফজলুল হক মুসলিম হলের এ্যাসেম্বলি হলে এক সভা ডাকা হলো,সেখানে স্থির হল একটা ছাত্র প্রতিষ্ঠান করা হবে। যার নাম হবে ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ।
শেষপর্যন্ত হুমায়ুন সাহেবের রোজ গার্ডেন বাড়িতে সম্মেলনের কাজ শুরু হয়েছিল। শুধু কর্মীরা না, অনেক রাজনৈতিক নেতাও সেই সম্মেলনে যোগদান করেন। সকলেই একমত হয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করলেন; তার নাম দেওয়া হলো, ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, জনাব শামছুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং আমাকে করা হলো জয়েন্ট সেক্রেটারি।
১৬ তারিখ সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারন ছাত্রসভায় আমরা সকলেই যোগদান করালাম। হঠাৎ কে যেন আমার নাম প্রস্তাব করে বসল সভাপতির আসন গ্রহণ করার জন্য। সকলেই সমর্থন করল। বিখ্যাত আমতলায় এই আমার প্রথম সভাপতিত্ব করতে হলো।
আমি সাধারণ সম্পাদক (আওয়ামী মুসলিম লীগের) হয়েই একটা প্রেস কনফারেন্স করলাম। তাতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে হবে, রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে এবং যারা ২১শে ফেব্রুয়ারী শহীদ হয়েছেন তাঁদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দান এবং যারা অন্যায়ভাবে জুলুম করেছে তাদের শাস্তির দাবি করলাম।
জনগনের পক্ষ থেকে আমি ঘোষণা করছি, আজ হতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম ‘পূর্ব পাকিস্তান’ এর পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ’ হবে।
আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না। আমি এদেশের মানুষের অধিকার চাই।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে স্বাধীনতার ঘোষনা দেওয়ার পরপরই আমাদের ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর সড়কের পাকিস্তনি সেনাবাহিনী হানা দেয় এবং আমার পিতাকে গ্রফতার করে নিয়ে যায়।
আমি হিমালয় দেখিনি কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব এবং সাহসিকতায় তিনিই হিমালয়।
বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা pdf – রচনা প্রতিযোগিতা
হে বন্ধু বঙ্গবন্ধু, তোমার কালো ফ্রেমের চশমাটা আমায় দাও, আমি চোখে দিয়ে দেখব, তুমি কেমন করে দেশটাকে এতো ভালোবাসো।
সূচনাঃ বিভিন্ন জাতির শ্রেষ্ঠ পুরুষ থাকে। তেমনই বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ পুরুষ হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালির শ্রেষ্ঠতম অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আর এই স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে যার নাম চিরস্মরণীয় হয়ে আছে, তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। পাকিস্তান সৃষ্টির অল্প কিছুকাল পরেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে বৈষম্য আর পরাধীনতার গ্লানি। ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠীর সঙ্গে এ দেশের জনগণের দ্বন্দ্ব আরও সুস্পষ্ট হয়।
নিপীড়িত জাতির ভাগ্যাকাশে যখন দুর্যোগের কালােমেঘ, তখনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেখ মুজিবুর রহমানের গৌরবময় আবির্ভাব। অসাধারণ দেশপ্রেম ও দূরদর্শী নেতৃত্ব দিয়ে তিনি সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন। কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি তাই ভালােবেসে ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু‘ উপাধিতে ভূষিত করে। স্বাধীনতার পর তাকে ‘জাতির পিতা’-র মর্যাদায় অভিষিক্ত করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্ম ও শিক্ষা
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ গােপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শেখ লুৎফর রহমান, মা সায়েরা খাতুন। দুই ভাই, চার বােনের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পিতা-মাতার তৃতীয় সন্তান। পারিবারিক আনন্দঘন পরিবেশে টুঙ্গিপাড়ায় তার শৈশব-কৈশােরের দিনগুলাে কাটে। গিমাডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর তিনি গােপালগঞ্জ মিশন হাইস্কুলে ভর্তি হন এবং এই স্কুল থেকে ১৯৪১ সালে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন। এই সময় তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক ও হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী গােপালগঞ্জ মিশন স্কুলে এক সংবর্ধনা সভা শেষে ফিরে যাচ্ছিলেন, পথরােধ করে দাঁড়ালেন শেখ মুজিবুর রহমান। স্কুলের ছাত্রাবাস জরাজীর্ণ। ছাত্রাবাস মেরামতের জন্য অর্থ চাই।
শেরে বাংলা প্রথমে কিশাের মুজিবের সাহস ও স্পষ্ট বক্তব্য আর জনহিতৈষী মননাভাবের পরিচয় পেয়ে বিস্মিত হন। তিনি প্রশ্ন করলেন কত টাকা চাই। দৃপ্তকণ্ঠে কিশাের মুজিব বললেন- বারাে’শ টাকা। শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক সাথে সাথে টাকার ব্যবস্থা করলেন। বাল্যকাল থেকেই শেখ মুজিবুর রহমান একটু অন্যরকম ছিলেন। একবার নিজের বাড়ির গােলার ধান গ্রামের গরিব চাষিদের মাঝে বিলিয়ে দেন। পিতা শেখ লুত্যর রহমান এর কারণ জিজ্ঞেস করলে উত্তরে তিনি বলেছিলেন, এবার চাষিদের জমির ধান সব বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে। আকালে পড়েছে কৃষক। আমাদের মতাে ওদের পেটেও ক্ষুধা আছে। ওরাও আমাদের মতাে বাঁচতে চায়। বাবা ছেলের এই সৎ সাহস ও মহানুভবতা দেখে বেশ খুশি হলেন। এভাবে শেখ মুজিবুর রহমান গরিবের বন্ধু আর নিপীড়িত মানুষের হৃদয় জয় করেন।
কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে ১৯৪৪ সালে আইএ এবং ১৯৪৬ সালে বিএ পাশ করেন তিনি। ১৯৪৬ সালে ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রসংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ছাত্র শেখ মুজিবুর রহমান ক্রমেই নেতা মুজিবে বিকশিত হতে থাকেন। ১৯৪৭-এ দেশ বিভাগের পর তিনি আইন পড়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
রাজনৈতিক জীবন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রাহমানের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৩৯ সালে মিশনারি স্কুলে পড়ার সময়। স্কুলের ছাদ সংস্কারের জন্য একটি দল গঠন করে নিজ নেতৃত্বে তিনি শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের নিকট দাবি পেশ করেন।১৯৪০ তিনি নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে এক বছরের জন্যে যুক্ত হন। পরবর্তীতে ১৯৪২ সালে এনট্র্যান্স পাশ কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে আইন পড়ার জন্য ভর্তি হন।
কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমান নাম মাওলানা আজাদ কলেজ) পড়া থেকেই তিনি সক্রিয়ভাবে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৪৩ সালে তিনি বেঙ্গল মুসলিম লীগে যোগ দান করার সুবাধে তিনি বাঙালি মুসলিম নেতা হুসেইন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সান্নিধ্যে আসেন। একটি পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র গড়ে তোলার আন্দোলন নিয়ে তিনি ১৯৪৩ সালে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান পৃথক হওয়ার পর হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা শুরু হয়। মুসলিমদের রক্ষা করার জন্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোহরাওয়ার্দীর সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক তৎপরতায় যুক্ত হন। এরপর ঢাকায় ফিরে এসে ১৯৪৮ সালের জানুয়ারির ৪ তারিখে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রধান ছাত্রনেতায় পরিণত হন।
ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
মূলত বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবি অর্থাৎ ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক তৎপরতার বিকাশ ঘটে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন গণ-পরিষদের ১৯৪৮ সনের ফেব্রুয়ারি ২৩ তারিখে অধিবেশনে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা বলার পরিপেক্ষিতে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
তখন বঙ্গবন্ধু এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরুর সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪৮ সালে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হলে এর সঙ্গে তিনি যুক্ত হন। এ বছর ১১ই মার্চ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে হরতাল পালনের সময় তিনি গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ হন। ‘বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে সুপারিশ করে পূর্ববঙ্গ পরিষদে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে’- এ মর্মে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে পূর্ববঙ্গের নাজিমুদ্দিন সরকার চুক্তিবদ্ধ হলে তিনি মুক্তি লাভ করেন।
আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা
সোহরাওয়ার্দী এবং মাওলানা ভাসানী কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করার পর বঙ্গবন্ধু মুসলিম লীগ ছেড়ে দেন। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হলে তিনি যুগ্ম সম্পাদকের পদ লাভ করেন এবং ১৯৫৩ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন
১৯৫৩ সালে দলের সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ১৪ নভেম্বর সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য অন্যান্য দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৫৪ সালের ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ২৩৭ টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩ টি আসনে বিপুল ব্যবধানে জয় লাভ করে। যার মধ্যে ১৪৩ টি আসনই আওয়ামী লীগ লাভ করেছিল।
গোপালগঞ্জে আসনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল শক্তিশালী মুসলিম লীগ নেতা ওয়াহিদুজ্জামান। যাকে তিনি ১৩,০০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। ১৫ মে বঙ্গবন্ধু কৃষি ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর ২৯ মে কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট ভেঙে দেয় এবং ৩০ মে ঢাকায় ফিরার পথে বন্দর থেকেই তাকে আটক করা হয়। দীর্ঘ ৭ মাস পর ২৩ ডিসেম্বর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে ১৯৫৫ সালের ৫ জুন আইন পরিষদের সদস্য মনোনীত হলে তিনি পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে ২১ দফা দাবি পেশ করেন।
ছয় দফা আন্দোলন
১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়। এ সময় বঙ্গবন্ধু সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধকল্পে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এ দেশের মানুষের অধিকার আদায় এবং শােষণ-বঞ্চনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বহুবার গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ হন।
১৯৬৬ সালে তিনি পেশ করেন বাঙালি জাতির ঐতিহাসিক মুক্তির সনদ ছয় দফা। এ সময় নিরাপত্তা আইনে তিনি বারবার গ্রেফতার হতে থাকেন। আজ গ্রেফতার হয়ে আগামীকাল জামিনে মুক্ত হলে সন্ধ্যায় তিনি আবার গ্রেফতার হন। এরকমই চলে পর্যায়ক্রমিক গ্রেফতার। তিনি কারারুদ্ধ জীবনযাপন করতে থাকেন। তাঁকে প্রধান আসামি করে দায়ের করা হয় আগরতলা মামলা।
উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও বঙ্গবন্ধু
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চলাকালীন সময়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি ৫ তারিখে দফা দাবি পেশ করে যার মধ্যে শেখ মুজিবের ছয় দফার সবগুলোই দফাই অন্তর্ভুক্ত ছিল। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু হয়। যা পরবর্তীতে গণ আন্দোলনের রূপ নেয়। এই গণ আন্দোলনই ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান নাম পরিচিত।
মাসব্যাপী চলতে থাকে আন্দোলন, কারফিউ, ১৪৪ ধারা ভঙ্গ, পুলিশের গুলিবর্ষণ। পরবর্তীতে এই আন্দোল চরম রূপ ধারণ করলে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান তাদের রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে গোলটেবিলে বৈঠকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
উপাধি
১৯৬৯ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক আয়ােজিত রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লক্ষ মানুষের এক নাগরিক সংবর্ধনায় তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশের “জাতির জনক” বা “জাতির পিতা” হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি ২০১৯ সালের ১৬ আগস্ট জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে তাকে ‘বিশ্ব বন্ধু’ (ফ্রেন্ড অব দ্যা ওয়ার্ল্ড) হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের গান্ধী শান্তি পুরষ্কারের জন্য বঙ্গবন্ধুর নাম ঘোষণা করে। বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে এই পুরষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়।
স্বাধীনতার ঘোষক বঙ্গবন্ধু
জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১লা মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করার প্রতিবাদে শেখ মুজিবুর রহমান ৩রা মার্চ অসহযােগ আন্দোলনের ডাক দেন। ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভায় বঙ্গবন্ধু ঘােষণা করেনঃ
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রামএবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।
২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পাকবাহিনীর হত্যাযজ্ঞে সারা বাংলাদেশের মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এমনি অবস্থায় গ্রেফতারের আগ মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বাধীনতার ঘােষণা দেন তা ওয়ারলেসের মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়ে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম.এ. হান্নান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে পাঠ করলে সারাদেশে ব্যাপক আলােড়ন সৃষ্টি হয়। পূর্ব বাংলা রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হয়ে ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রচার করে, ফলে বিশ্ব বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণা সম্পর্কে জানতে পারে।
আরও দেখোঃ মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের তাৎপর্য
শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড
দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূর্য উদিত হয়। বিজয় দিবস বাঙালির বিজয় সূচিত হয়।বাংলাদেশের বিজয়ের পর ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দেওয়া হয়। দেশে ফেরার পর ১২ই জানুয়ারি তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শাসনভার গ্রহন করেন। এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তােলার কাজে আত্মনিয়ােগ করেন। কিন্তু পরাজিত হায়েনার দল তার সাফল্য ও বাঙালির উত্থানকে মেনে নিতে পারেনি।
তাই আবার শুরু হয় ষড়যন্ত্র। দেশ যখন সকল বাধা দূর করে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন দেশীয় ষড়যন্ত্রকারী ও আন্তর্জাতিক চক্রের শিকারে পরিণত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সামরিক বাহিনীর তৎকালীন কিছু উচ্চাভিলাষী ও বিপথগামী সৈনিকের হাতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হন। তাই বাঙালি জাতি প্রতিবছর ১৫ ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করে।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত গ্রন্থাবলি
সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই দুইটি খন্ডে তার আত্মকাহিনী লিখেন। যেখানে তিনি ব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বর্ণনা করেছেন। মৃত্যুর পর তার কন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রচনা দুটি গ্রন্থ আকারে প্রকাশ করেন।
শারীরিকভাবে শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু হলেও তিনি অমর, অক্ষয়। ২০১২ সালে প্রকাশিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর বৈচিত্র্যময় জীবনের অসাধারণ এক খণ্ডাংশ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। দেশপ্রেমিক প্রতিটি বাঙালি হৃদয়ে চির অম্লান হয়ে রয়েছে একটি নাম- শেখ মুজিবুর রহমান। কবি অন্নদাশংকরের ভাষায় বলতে হয়
যতকাল রবে পদ্মা-যমুনা-গৌরী-মেঘনা বহমানততকাল রবে কীর্তি তােমার শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধুর অবদান
দ্বিধাবিভক্ত পরাধীন জাতিকে সুসংগঠিত করে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করা এবং সঠিক নেতৃত্ব দেওয়া সহজ কাজ নয়। অথচ এই কঠিন কাজটি বঙ্গবন্ধু খুব সহজেই করতে পেরেছিলেন। স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার সংগ্রাম সবই পরিচালনা করেছেন শেখ মুজিবুর রহমান অসীম দক্ষতা ও যােগ্যতায়। তাঁর ছিল মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার মতাে অসাধারণ বজ্রকণ্ঠ। অনলবর্ষী বক্তা হিসেবে তাঁর ছিল বিপুল খ্যাতি। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে। অকৃত্রিম দেশপ্রেম, সাধারণ জনগণের প্রতি গভীর ভালােবাসা, অমায়িক ব্যক্তিত্ব, উপস্থিত বুদ্ধি তাঁকে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত করেছে। স্বাধীনতার পর তিনি খুব বেশিদিন ক্ষমতায় থাকার সুযোগ পাননি। যতটুকু সময় ক্ষমতায় ছিলেন, তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
১৯৭২ সালের ১২ই জানুয়ারি ক্ষমতা লাভের পর কিছুদিনের মধ্যে ভারতীয় বাহিনীর দেশত্যাগ করা এবং মুক্তিবাহিনীর অস্ত্রসমর্পণ করার ঘােষণা দেন। বিশ্বের ১০৪টি দেশ স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ, জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন ও ইসলামি সম্মেলন সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে বঙ্গবন্ধুর আমলে। ১৯৭২ সালের ১৪ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের নতুন সংবিধান গৃহীত হয়। তাঁর সরকারের সময় ব্যাংক, বিমাসহ শিল্পকারখানা জাতীয়করণ করা হয়। ১৯৭৪ সালে তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রথম বাংলায় বক্তৃতা দেন। তাঁর নেতৃত্বে অর্জিত হয়েছিল বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্ন স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা বাঙালি জাতির জীবনে সূচনা করেছে এক নবদিগন্ত। আত্মপরিচয়হীন জাতি খুঁজে পেয়েছে তার অস্তিত্ব ও আত্মমর্যাদা।
মুজিব বর্ষ
মুজিব বর্ষের লোগো |
উপসংহার
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে যার নাম উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতাে দীপ্যমান তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর দূরদশী, বিচক্ষণ এবং সঠিক নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি এবং স্বাধীন বাঙালি জাতির জনক। তিনি নিজের স্বার্থকে কখনােই প্রাধান্য দেননি। জাতির কল্যাণের কথাই তিনি সবসময় ভেবেছেন। জেল-জুলুম ও নির্যাতনের কাছে তিনি কখনাে মাথা নত করেননি।
সমস্ত জাতিকে তিনি মুক্তি ও স্বাধীনতার চেতনায় ঐক্যবদ্ধ ও উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তাঁর আত্মত্যাগ জাতিকে মহান মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া বাঙালি জাতির অস্তিত্বকে অস্বীকার করার শামিল। ‘বঙ্গবন্ধু‘ ও ‘বাংলাদেশ‘ আজ সমগ্র বাঙালি জাতির কাছে এক ও অভিন্ন নাম।
তোমার স্বপ্নে পথ চলি আজো
চেতনায় মহীয়ান।
মুজিব তোমার অমিত সাহসে
জেগে আছে কোটি প্রাণ।