বেলা ফুরাবার আগে – আরিফ আজাদ

(2 customer reviews)

৳ 250.00

Title বেলা ফুরাবার আগে
Author
Publisher
ISBN 9789849484400
Edition 1st Published, 2020
Number of Pages 192
Country বাংলাদেশ
Language বাংলা

Book introduction
Name of the book: – Before the end of the day
Author: Arif Azad
Publications: – Contemporary publications
.

How indifferent we are to the five daily prayers! But Allah (SWT) has made these five daily prayers obligatory for us. Obligation means duty, of course observance.

Taking oxygen from the air and spreading carbon dioxide in the air is as important as taking oxygen and not giving up carbon dioxide. Is it possible for a person who is in the crisis of Islam to rush to the mosque in the same way as he runs to the hospital to make up for the lack of oxygen?

Because the oxygen crisis is physical and the lack of Islam is spiritual.
The more anxious and worried we are about our bodies, the more emotionless we are about our souls.

Talented writer-
Arif Azad sir
From the book “Before the end of the day”.

 

Book review before the end of the day
Before the end of the day, there was a lot of interest in the book among the youth because the author of the book is Arif Azad.
How many cuckoos call dawn, rice rice noon, and how many springs have passed as the boat floats with the flow of time. In the afternoon as the evening is gradually overshadowed by gray. In the course of time, the floating boat is slowly approaching the river bank. In the evening all the birds return to their destination, and the river returns to its ever-familiar estuary. Yet some people do not want to leave the bondage of delusion and a little Maya and return to the light of darkness, to the path of eternal bliss.
Still, you have to go back, you have to recognize the bank of the river in the dim light before the end of the day. The ark of life must be tied to the shore from the pitch darkness of modernity. As the sun has an end, the moon has an end, the train called life has an end. You just have to start anew, you have to burn in your strength, you have to add another time today, but let’s dive ………………..

Author introduction
Arif Azad Bhai was born on January 7, 1990 in Chittagong. Then he completed his secondary education from Chittagong District School. After completing higher secondary from a government college, he was admitted to Chittagong University and completed his higher education degree there.
While he was at Chittagong University, he started writing on various blogs and social media. At first he started answering various questions of the atheists and later the answers to those questions were published in the form of books which broke the backbone of the imaginary paradise wall of the four walls of atheist domination and original freedom in the literary world.
His first book ‘Paradoxical Sajid’ was published at Ekushey Book Fair 2016. The central character of the book, Sajid, refutes the disbelief of his atheist friend through various conversations through various scientific arguments and humiliates the atheists.
The book became a bestseller. That path has not stopped yet, it will never stop. InshaAllah

Why read the book
The night is spent thinking about the princess of dreams, the day is spent failing to regain the memory lost, the cigarette smoke called Sukhtan is spent, thus the days of countless lost youths are spent. This book was written before the end of the day to bring them back to the light of that Hera of Abdullah Ibn Muhammad (peace be upon him) 1400 years ago.
In the light of Hera, innumerable lost youths whose names are still written in golden letters in the pages of Muslim history, whose souls have gone to that path of eternity, to go on that eternal path before the end of this book.

What is the book written about?
This book is written before the end of the day to write about the solutions to the problems faced by young men and women to return to the path of religion in today’s society.
Notable among them is the fact that “we are just friends, here the author has solved the culture that has become prevalent in our society called boy-girl friend of the present time.”
Besides, why don’t I sit in prayer,
On a sad day,
Why am i so sad
I will keep you in my heart .. ..
I will be the morning bird
Etc. This book is written about the solution of the problems of the society. You must read this book. InshaAllah

 

review 02:

“Before the end of the day”
Author: Arif Azad

It seems that even with a few thousand lines of review, the picture of this book cannot be presented. Every line of the book is fascinating. How many times have I been lost in the world of imagination and the reality of life while reading the lines. It is as if you have the opportunity to realize yourself in a new way. Why on earth did I come? Do we really want to be noticed? How is our life going in this test called the world?
Why are we getting frustrated with the various tests of God in this world of mere games and jokes? What was the behavior of our ancestors in the most difficult test of life?
The world is crowded between us. Going to paint the world in colors, I am going wrong with the orders of the great Lord. The glorious teachings of the Prophets and their Companions.
I am getting involved in haraam relationships on various pretexts. How much have we taken care of our youth for that man of the future (husband / wife)? But I was supposed to wait with them to see Jotsa, to walk hand in hand.
I am drowning in despair in various equations in life. I am forgetting about the test of Allah. I am choosing songs, poems, cigarettes or anything else as a way out of frustration. How many are returning to prayers?
Nothing to say about Arif Azad’s writing. He has introduced his beautiful (Alhamdulillah) writing in previous books. But this book is different. This book will make him realize the real happiness, the real success, the real problems that young people face in practicing religion, the obstacles in coming to the path of religion, the current culture, the splendor of corporate life.
The book has inspired me to take the path of the great Lord before the end of the day, to correct myself.
Brother Arif Azad, I love you for the sake of Allah. May Allah reward you well.
.

The book is basically a self-improvement book. I couldn’t read without seeing the reviews and titles of the book. I have learned a lot by reading the book.

This book is a mirror of our self-discovery. The book will refresh our conscience to start walking the path with proper awakening of our conscience. As a Muslim, in order to read good books, one needs to read such books. Everyone was urged to read the book.

লেখক

আরিফ আজাদ বই

2 reviews for বেলা ফুরাবার আগে – আরিফ আজাদ

  1. Panna khanom

    বেলা ফুরাবার আগে
    আরিফ আজাদ সমগ্র
    আরিফ আজাদের বিখ্যাত লিখনিসমূহ
    আমার এত দুঃখ কেন? পার্ঠ ৩
    [ ক ]
    মাঝে মাঝে ভীষণ কষ্ট লাগে। বুকের ভেতরে বাসা বাঁধে দুঃখের কালাে মেঘ। অবিরাম বৃষ্টিধারার মতাে বিষন্নতা এসে আছড়ে পড়ে মনের উঠোনে। আকাশছোঁয়া হিমালয় যেন তার সমস্ত ঐশ্বর্য নিয়ে ভেঙে পড়তে চায় বুকের ওপর। জগৎসংসার তখন বিষাক্ত লাগে।
    মাঝে মাঝে প্রচণ্ড দুঃখবােধে ভেঙে পড়ি আমরা। হয়তাে হঠাৎ করে হারিয়ে বসি কোনাে প্রিয় মানুষকে। খুব আশা করে থাকি এবারের পৌষের শীতে মায়ের হাতে বানানাে ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠা খাব বলে। কিন্তু পৌষ আসার আগেই মা হয়তাে দুনিয়ার পাঠ চুকিয়ে ওপারে পাড়ি জমিয়েছেন। অথবা, আস্তে আস্তে করে জমানাে টাকা, যে টাকা দিয়ে বাবাকে ঈদে উপহার দিয়ে চমকে দেবাে ভেবেছিলাম, ঈদ আসার আগেই হয়তাে বাবা চলে গেছেন রবের সাক্ষাতে।
    এমনও হতে পারে, ভালাে বেতনের কোনাে চাকরি হঠাৎ করেই চলে গেল। অথবা, আমার এক বন্ধু আমার সমান যােগ্যতা নিয়ে জীবনে সাঁই সাঁই করে উন্নতি করছে, কিন্তু আমি কিছুই করতে পারছি না। আমার বন্ধু আমার সমান খাটা-খাটুনি করে খুব ভালাে রেজাল্ট করছে, কিন্তু আমি পারছি না।
    পারিবারিক অথবা দাম্পত্য জীবনটাও খুব একটা ভালাে যাচ্ছে না। ব্যবসায় লােকসান হচ্ছে। খেতে নষ্ট হচ্ছে ফসল। উর্বরতা হারাচ্ছে আবাদি জমি। মরে যাচ্ছে গবাদি পশু। বন্যায় ভেসে গেছে একমাত্র আশ্রয়। অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে তিলে তিলে জমানাে সম্পদ। মাথার ওপর বেড়েই চলেছে ঋণের বােঝা। আবার, এমনও হতে পারে, কাছের মানুষগুলাে আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছে। সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটিও আজ আর ফিরে তাকাচ্ছে না। বাড়ছে দূরত্ব। ভেঙে যাচ্ছে সম্পর্কের বন্ধন এমন নানান রকম জীবন সমস্যার মুখােমুখি কমবেশি আমরা সকলেই হয়ে থাকি। আমরা ভেঙে পড়ি। ভেতরে ভেতরে খুঁড়িয়ে যাই। আশাহত হই। বিষন্নতার বিষবাষ্পে ছেয়ে যায় আমাদের হৃদয়কোণ। কিন্তু আমাদের সাথে কেন এমনটা হয়?
    [খ]
    আমরা সকলেই ‘‘পরীক্ষা’ শব্দটির সাথে পরিচিত। স্কুল, কলেজ ইউনিভার্সিটিগুলােতে আমরা পরীক্ষা দিই। পরীক্ষায় পাশের জন্য আমরা দিনরাত পড়াশুনা করি। নােট করি। নিয়মিত ক্লাস করি। দুনিয়ার জীবনটাও আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য ঠিক সে রকম একটা পরীক্ষা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের এই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন পরীক্ষা করার জন্যই। আমরা তাঁর অনুগত বান্দা কি না তা যাচাইয়ের জন্য। নাহ, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা অবশ্যই এই যাচাই-বাছাইয়ের ফলাফলের ওপর নির্ভরশীল নন। তিনি আলিমুল গায়েব। ভূত-ভবিষ্যৎ সবকিছুই তিনি জানেন। তিনি জানেন আমাদের মধ্যে কে কে তাঁর অনুগত আর কে কে তাঁর অবাধ্য। চাইলেই তিনি আমাদের দুনিয়াতে না পাঠিয়ে সরাসরি আমাদের রূহ তথা আত্মাগুলােকে হয় জান্নাতে আর না হয় জাহান্নামে দিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি এমনটি করেননি। কারণ, তিনি আমাদের কোনাে প্রশ্ন করার সুযােগ দিতে চাননি। কী রকম প্রশ্ন? কিয়ামতের মাঠে যাতে আমরা অভিযােগ করে বলতে না পারি, ‘আপনি আমাদের তাে পরীক্ষাই করেননি। পরীক্ষা ছাড়াই আমাদের জাহান্নামে পাঠিয়েছেন। অথচ আমার পরীক্ষা নিলে আজকে আমি জাহান্নামের বদলে জান্নাতে থাকতে পারতাম!
    দুনিয়াকে আল্লাহ তাআলা বানিয়েছেন বিশাল একটা পরীক্ষাকেন্দ্র। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কুরআনে বলছেন-
    عَسَى أَن تُحِبُّواْ شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَّكُمْ وَاللّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لاَ تَعْلَمُونَ
    আমি অবশ্যই তােমাদের পরীক্ষা করব ভয়, ক্ষুধা এবং তােমাদের) জানমাল ও ফসলাদির ক্ষয়ক্ষতির মাধ্যমে। আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন [1]
    [1]সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৫
    আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের পরীক্ষা করবেন ভয়ভীতি দিয়ে। কখনাে কি এমন হয়েছে যে, আপনি বাসে করে কোথাও যাচ্ছেন এবং সেই বাসটা হঠাৎ করে দুর্ঘটনার কবলে পড়ল? সেই দুর্ঘটনায় মারা গেছে আপনার পাশের যাত্রীটা, কিন্তু আপনার তেমন কোনাে ক্ষতিই হয়নি। হয়েছে এ রকম?
    দূরের যাত্রার বিরক্তি কাটাতে একটু আগেও দুজনে পাশাপাশি দিব্যি খােশগল্প করছিলেন। কিন্তু কয়েক মিনিটের ব্যবধানেই আপনার পাশের সেই সহযাত্রী এখন মৃত আর আপনি জীবিত রয়ে গেলেন। এই দুর্ঘটনায় কিন্তু আপনারও মৃত্যু হতে পারত। পাশের সহযাত্রীর মতাে আপনিও কিন্তু লাশে পরিণত হতে পারতেন। আপনার নামের পাশে ‘আহত’ শব্দের বদলে শােভা পেত নিহত’ শব্দটি। কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আপনাকে বাঁচিয়ে নিয়েছেন। চাক্ষুষ এই ভয়ানক দৃশ্য অবলােকন করিয়ে আল্লাহ আপনাকে পরীক্ষা করেন। তিনি দেখতে চান যে, আপনি এই দৃশ্য থেকে শিক্ষা নেন কি না। তাঁর শােকর আদায় করেন কি না। তার অবাধ্যতা থেকে ফিরে আসেন কি না। তিনি দেখতে চান, এই মৃত্যুর দৃশ্যটা আপনার হৃদয়ে কতটা প্রভাব ফেলে। আপনার বােধােদয় ঘটে কি না। এ রকম বিভীষিকাময় দৃশ্য দেখে আপনি মৃত্যুভয়ে কাতর হয়ে পড়েন কি না—সেটাই হলাে আপনার জন্য পরীক্ষা।
    জীবনে এমন আরও বহু ঘটনার সাক্ষী আপনি হতে পারেন। লন্ডনে যাওয়ার জন্য আপনি বুধবার সকালের বিমানের টিকেট চেয়েছেন, কিন্তু পেয়েছেন বুধবার বিকেলের। সকালের টিকেট না পাওয়ায় আপনার প্রচণ্ড মন খারাপ হতে পারে সকালের টিকেট না পাওয়ায় লন্ডনে কোনাে একটা পার্টিতে আপনি অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। হতে পারে ম্যানচেস্টার শহরের কোনাে এক মনােজ্ঞ অনুষ্ঠান আপনি মিস করবেন। অস্বাভাবিক নয়।
    কিন্তু সকালের টিকেট না পাওয়াতে একরাশ দুঃখ আর মন খারাপ নিয়ে টিভি খুলে যখন দেখতে পেলেন লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা সকালের নির্ধারিত সেই ফ্লাইট ক্র্যাশ করেছে এবং নিহত হয়েছে বিমানের সকল যাত্রী, তখন কেমন লাগবে আপনার বলুন তাে? মিস হয়ে যাওয়া ম্যানচেস্টারের ওই মনােজ্ঞ অনুষ্ঠান কি আপনার প্রাণের চেয়েও মূল্যবান? সকালের ফ্লাইট মিস হয়ে যাওয়ায় আপনার কি তখনাে মন খারাপ থাকবে? আফসােস হবে?
    মানুষের একটা বৈশিষ্ট্য হলাে সে নিজেকে সবসময় নির্ভুলতার আসনে দেখতে পছন্দ করে। সে মনে করে তার জীবনের সব ভালােমন্দ, ঠিক-বেঠিক বােঝার ব্যাপারে সে-ই যথেষ্ট। নিজের জন্য পছন্দ করা জিনিসটা কীভাবে তার জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে সেটা মানুষ ভাবতেও পারে না। আবার, এটাও মানুষ কল্পনা করতে পারে না যে, যেটা সে অপছন্দ করে, সেটা কীভাবে তার জন্য জীবনের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে উঠতে পারে। মানুষ এটা কখনােই বুঝতে পারবে না। এটা জানেন কেবল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা। কারণ, তিনিই অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের ব্যাপারে জ্ঞান রাখেন। এজন্যেই তিনি বলেছেন-
    عسى أن تكرهوا شيئا وهو خير له وعسى أن تحبوا شيئا وهو شر لكم والله يعلم وأنتم لا تعلمون
    হয়তাে তােমরা যা অপছন্দ করাে তা-ই তােমাদের জন্য কল্যাণকর আর তােমরা যা পছন্দ করাে, সেটা হতে পারে অকল্যাণকর। বস্তুত আল্লাহ জানেন। কিন্তু তােমরা জানাে না।[1]
    সুরা বাকারা, আয়াত : ২১৬
    আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা দেখতে চান, এ রকম নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে আপনাকে বাঁচানাের পরেও আপনি পরের বার ম্যানচেস্টার শহরের মদের বারে যান কি । তিনি দেখতে চান, রাত হলেই আপনি তার অবাধ্যতায় গা ভাসিয়ে কোনাে নাইট ক্লাবে গিয়ে ফুর্তিতে মেতে ওঠেন কি না। এই যে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে আপনার মধ্যে একটা ভয় ধরিয়ে দেওয়া, সেটাই আল্লাহর পরীক্ষা। তিনি দেখতে চান এই ভয় আপনাকে কোন দিকে নিয়ে যায়। আল্লাহর পথে না শয়তানের রাস্তায়?
    আল্লাহ তাআলা পরীক্ষা করবেন ক্ষুধা-অনাহারের মাধ্যমে। এই উদাহরণের যথার্থতা উপলব্ধি করার জন্য রাস্তার একজন ভিক্ষুকের দিকে তাকান। অথবা সেই অভাবী লােকটার দিকে যে অপলক দৃষ্টিতে আপনার বার্গার খাওয়ার দৃশ্যটি অবলােকন করে। খুব বেশি দূরেও যেতে হবে না—মায়ানমার থেকে আসা লক্ষ লক্ষ শরণার্থীদের কথা ভাবুন তাে। কতটা মানবেতর তাদের জীবন! তাদের ওপর এই যে অত্যাচার, এই যে ক্ষুধার যন্ত্রণা, হতে পারে এটা তাদের জন্য পরীক্ষা।
    বন্যায় ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়াটা একজন কৃষকের জন্য পরীক্ষা হতে পারে। আগুন লেগে ফ্যাক্টরি পুড়ে যাওয়াটা একজন ব্যবসায়ীর জন্য পরীক্ষা হতে পারে। মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান কিংবা কাছের কেউ মারা যাওয়া-সহ নানানভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের পরীক্ষা করতে পারেন। রােগ-শােক, জরা-ক্লিষ্টতা ইত্যাদি হতে পারে আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য পরীক্ষাস্বরূপ।
    [গ]
    ছােটবেলায় হাটে গেলে ঢু মেরে আসতাম কামারের দোকানে। দেখতাম লােহাকে কীভাবে কড়া আগুনে পুড়িয়ে পিটানাে হতাে। ভয় পেতাম। মনে হতাে, এই লােহাগুলােকে যে এভাবে পােড়াচ্ছে, এগুলাে তাে ছাই হয়ে যাবে। আস্তে আস্তে বুঝলাম যে লােহাকে এভাবে পােড়ালে আসলে ছাই হয় না; বরং লােহা আরও মজবুত এবং ব্যবহার উপযােগী হয়ে ওঠে। আগুনের ‘পােড়ানাে ধর্ম আর লােহার বস্তু ধর্ম মাথায় নিয়ে আগুন এবং লােহার মধ্যকার এই যােগসূত্র বুঝতে আমার অনেক দিন লেগেছিল।
    ‘পরীক্ষা’ হিশেবে জীবনের এই যে নানামুখী সমস্যা ও সংকট, এগুলাে হলাে আগুনের মতাে। আর বান্দাকে তুলনা করা যায় লােহার সাথে। আগুন আর লােহার সম্পর্ক যেমন পুড়িয়ে নিঃশেষ বা ধ্বংস করে ফেলা নয়, বরং সুন্দর ও উপকারী কিছু তৈরি করা, আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা এই পরীক্ষাগুলােও বান্দার জন্য খারাপ কিছু নয়, বরঞ বান্দাকে পরিশুদ্ধ করে তােলাই আল্লাহর ইচ্ছা। আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদেরই বেশি পরীক্ষা করেন। আল্লাহ যদি চান যে তাঁর কোনাে বান্দা শুদ্ধ আর শুভ্রতার স্পর্শে পবিত্র হয়ে উঠুক, তখন তিনি সেই বান্দার বেশি বেশি পরীক্ষা নেন।
    নবি-রাসুলদের জীবনের দিকে তাকালেই আমরা এর সত্যতা দেখতে পাই। সম্ভবত আল্লাহ তাআলা এমন কোনাে নবি-রাসুল দুনিয়ায় প্রেরণ করেননি, যাকে কঠিন পরীক্ষার ভেতর দিয়ে যেতে হয়নি। শিশু মুসা আলাইহিস সালামকে তাে শত্রুর ভয়ে বাক্সে ভরে দরিয়ায় নিক্ষেপ করতে হয়েছিল। বড় হয়ে ওঠার পরেও কি তাকে কম পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে? ফিরাউনের মুখােমুখি হওয়া থেকে শুরু করে গভীর সংকট মাথায় নিয়ে লােহিত সাগর পার হওয়া। আহ! কতই-না সংকটাপন্ন মুহূর্ত ছিল সেগুলাে!
    নবি আইয়ুব আলাইহিস সালাম। শেষ বয়সে এসে আল্লাহর পরীক্ষার মুখােমুখি হয়ে গেলেন। দুরারােগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে একে একে হারাতে লাগলেন ধনসম্পদ, জমিজমা সবকিছু। এমনকি, নিজের ছেলেমেয়ে, আত্মীয়স্বজন সকলে তার এই দুরবস্থা দেখে তার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিল। তাকে ছেড়ে যায়নি কেবল তার পুণ্যবতী স্ত্রী।[১] চিন্তা করুন, আপনার ভীষণ বিপদের সময়ে, ঘােরতর সংকটে আপনার সবচেয়ে প্রিয় মানুষগুলাে যদি আপনাকে ছেড়ে চলে যায়, কেমন লাগবে আপনার? এজন্যেই দুনিয়ার সম্পর্কগুলােতে এমনভাবে জড়াতে নেই যা আখিরাতকে ভুলিয়ে দেয়। দুনিয়াবি সম্পর্কের মােহে যদি আপনি আখিরাতকে কম গুরুত্ব দেন, তাহলে আপনার বিপদের দিন যখন এই সম্পর্কগুলাে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাবে, তখন কিন্তু দুনিয়াটাই আপনার কাছে বিস্বাদ লাগবে। আত্মহত্যা করতে মন চাইবে।
    এ রকম পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন ইবরাহিম আলাইহিস সালাম। অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হয়েছিল তাকে। নুহ আলাইহিস সালামের ওপরে তার কওমের অত্যাচার এবং অবাধ্যতার মাত্রা এতই ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল যে, তাদের হাত থেকে নুহ আলাইহিস সালামকে বাঁচানাের জন্যে পুরাে কওমকেই আল্লাহ তাআলা বন্যার পানিতে তলিয়ে দিয়েছিলেন।
    ইউসুফ আলাইহিস সালামের জীবনের দিকেই তাকান। খুব ছােটবেলায় ভাইয়েরা শত্রুতা করে তাকে কূপে নিক্ষেপ করে। এরপর মিশরের রাজার কাছে গিয়েও বারে বারে পরীক্ষার মুখােমুখি হয়েছেন। কারাগারে পর্যন্ত নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন।
    শত্রুর হাত থেকে বাঁচাতে ঈসা আলাইহিস সালামকে তাে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আসমানেই তুলে নিয়েছেন। আর সর্বশেষ নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহর কতই-না উত্তম বান্দা আর রাসুল ছিলেন তিনি! জন্মের ঠিক আগেই বাবাকে হারিয়েছেন। দুনিয়াকে বুঝতে শেখার আগে হারিয়েছেন গর্ভধারিণী মাকে। যে প্রিয়তম চাচার কাছে আশ্রয় পেয়েছিলেন, একসময় তিনিও একা করে চলে যান। চোখের সামনে সন্তানদের মৃত্যু, প্রিয়তমা স্ত্রীর মৃত্যু—জীবনের চিত্রনাট্যে হারাবার আর বাকি থাকলই-বা কী? দ্বীনের দাওয়াত শুরু করার পরে তায়েফবাসীর নির্লজ্জ আঘাত, নিজ কওম দ্বারা দেশছাড়া-সহ এহেন অত্যাচার নেই যা তার ওপরে আরােপ করা হয়নি।
    [1] তাফসির ইবনু আবি হাতিম : ১৪৫৬২; ফাতহুল বারি, খণ্ড : ৬; পৃষ্ঠা : ৪২১; সহিহ ইবনু হিব্বান : ২৮৯৮; সিলসিলাতুল আহাদি সিস সহিহাহ : ১৭
    এই যে নবি-রাসুলদের জীবনে আরােপিত সমস্যা, নেমে আসা বিপদ, নিপতিত হওয়া সংকট—এসব কেন ছিল? তারা তাে নিষ্পাপ ছিলেন। কোনাে পাপ, কোনাে অন্যায় তাদের স্পর্শ করতে পারত না। তারপরও কেন তাদের জীবন ছিল দুর্ভোগময়? কেন তাদের মুখােমুখি হতে হয়েছে সবচেয়ে কঠিন সব পরীক্ষার এগুলাে এজন্যেই যে আল্লাহ তাদেরও পরীক্ষা করেছেন। বিপদের মুখে, সংকটের সামনে তারা আল্লাহর ওপর কতখানি ভরসা করেন তা-ই ছিল দেখার বিষয়।
    আমাদের শেখানাের জন্যই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা নবি-রাসুলদের জীবন থেকে এই ঘটনাগুলাে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। কঠিন, দুর্ভোগ-দুর্যোগ আর সংকটের সময়ে তারা আল্লাহকে কীভাবে আঁকড়ে ধরে ছিলেন, সেই শিক্ষা দেওয়ার জন্যেই কুরআনুল কারিমে এই ঘটনাগুলােকে তিনি স্থান দিয়েছেন।
    আমাদের জীবনেও এ রকম নানান পরীক্ষা নেমে আসতে পারে। ভিন্ন ভিন্ন অবস্থায়। ভিন্ন ভিন্ন রূপে। জীবনের এ রকম মুহূর্তগুলােকে আল্লাহর পরীক্ষা হিশেবে বরণ করে নেওয়াই হলাে একজন প্রকৃত মুমিনের কাজ।
    [ঘ]
    আমরা জেনে গেছি কেন আমাদের জীবনে দুর্যোগ নেমে আসে। কেন চারশ থেকে বিপদ আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে। কেন হুট করে আমরা প্রিয়জন, প্রিয়মুখ হারিয়ে ফেলি। কেন হতাশা গ্রাস করে ফেলে আমাদের অন্তর। এই জীবন হলাে পরীক্ষাক্ষেত্র আর আমরা সবাই হলাম পরীক্ষার্থী।
    তাহলে জীবন যখন এ রকম দুঃখ আর কষ্টের ভারে নুইয়ে পড়বে, যখন হৃদয় আকাশে ভর করবে কালবােশেখির ঘনকালাে মেঘ, যখন হতাশার অন্ধকারে ডুবে যাবে আমাদের তনুমন, তখন আমাদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে?
    আপনার যখন বড় কোনাে রােগ হবে, চারপাশ থেকে যখন কেবল হতাশা আর নিরাশার বাণী শুনতে পাবেন, যখন শূন্যতা ভর করবে আপনার দেহমনে, তখন আইয়ুব আলাইহিস সালামের ঘটনা মনে করবেন। মরণব্যাধি শরীর নিয়েও আল্লাহর স্মরণ থেকে তিনি এক মুহূর্তের জন্য গাফিল হননি। যখন আত্মার আত্মীয়রাও তাকে ছেড়ে চলে গেল, তিনি হতাশ হননি। এমন মুহূর্তে তিনি কেবল আল্লাহর কাছেই সাহায্য চেয়েছেন। বলেছেন-
    أَنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ
    হে আমার প্রতিপালক, দুঃখক্লেশ আমাকে স্পর্শ করেছে। আপনি তাে দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।1]
    খেয়াল করুন, আইয়ুব আলাইহিস সালামের কথার মধ্যে কিন্তু কোনাে অভিযােগ নেই, অনুযােগ নেই। নেই কোনাে আত্মম্ভরিতা। কেবল আছে বিনয় আর ভরসার অনন্য সমন্বয়। তিনি বলেননি, হে আল্লাহ, আমি কষ্ট পাচ্ছি। আমার কষ্ট কমিয়ে দিন। তিনি বলতে পারতেন, ‘মাবুদ! রােগের কারণে আমি দ্বীনের দাওয়াত দিতে পারছি না। আমাকে আপনি আরােগ্য দিন। তিনি এ রকম বলেননি। তিনি কেবল আল্লাহর সেই গুণের দ্বারা তাঁর প্রশংসা করেছেন, যে গুণের উল্লেখ কুরআনের একেবারে প্রথম সুরাতেই আমরা দেখতে পাই। আইয়ুব আলাইহিস সালাম বলেছেন, আপনি তাে দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু। আল্লাহর সিফাত তথা গুণের মধ্যে অন্যতম গুণ হলাে—আল্লাহ হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। তার চাইতে বড় দয়ালু আসমান-জমিনে আর কেউ নেই। সুরা ফাতিহার শুরুতেই আমরা এই ঘােষণা দিয়ে থাকি। আমরা বলি, ‘আর রাহমানির রাহিম’ অর্থাৎ যিনি হলেন পরম করুণাময় আর অসীম দয়ালু।
    আইয়ুব আলাইহিস সালাম অভিযােগ না করে বরং আবদার করেছেন। একজন দাস তার মালিকের কাছে যে সুরে আবদার করে, যে সুরে অনুনয়-বিনয় করে, নবি আইয়ুব আলাইহিস সালামও ঠিক একইভাবে তার মালিক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে আবদার করেছেন। সে আবদারে ভালােবাসা ছিল, ভরসা ছিল। নির্ভরতা ছিল।
    আইয়ুব আলাইহিস সালামের এই আকুল ফরিয়াদের পরে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তার দুআ কবুল করে নিলেন। তার দুঃখ মুছে দিলেন। রােগ সারিয়ে দিলেন। আল্লাহ বললেন-
    فَاسْتَجَبْنَا لَهُ فَكَشَفْنَا مَا بِهِ
    অতঃপর, আমি তার আহ্বানে সাড়া দিলাম এবং তার সব দুঃখকষ্ট দূর করে দিলাম।[2]
    [1]সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৮৩
    [2]সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৮৪
    যে আল্লাহ আইয়ুব আলাইহিস সালামকে আরােগ্য দিয়েছেন, তিনি কি আপনাকেও আরােগ্য দিতে পারেন না? অবশ্যই পারেন। কেবল আপনার অন্তরটাকে আইয়ুব আলাইহিস সালামের অন্তরের মতন পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করুন। আপনার অন্তরে আল্লাহর প্রতি ওই নির্ভরতা রাখুন, যে নির্ভরতা আইয়ুব আলাইহিস সালামের অন্তরে ছিল। এরপর আল্লাহর কাছে আকুল ফরিয়াদ করুন। মন খুলে আপনার কথা আপনার রবকে শােনান।
    বড় কোনাে বিপদে পড়ে গেলে একদম হতাশ হবেন না। ভেঙে পড়বেন না। আপনার ওপর আরােপিত বিপদ নিশ্চয়ই ইউনুস আলাইহিস সালামের বিপদের চেয়ে গুরুতর নয়। স্মরণ করুন ইউনুস আলাইহিস সালামের কথা। সমুদ্রের মাছ যখন তাকে গিলে ফেলল, কেমন সংকটাপন্ন ছিল সেই মুহূর্তগুলাে? চারদিকে কেবল অন্ধকার আর অন্ধকার। একটা ড্রমের ভেতরে চাপা পড়লেই যেখানে আমাদের দম বন্ধ হয়ে আসবে, সেখানে একটা মাছের পেটে তিনি বেঁচে থাকলেন কীভাবে? কে তাকে বাঁচিয়ে রাখলেন? আল্লাহ ছাড়া কার ক্ষমতা আছে মাছের পেটে নবি ইউনুস আলাইহিস সালামের জন্য অক্সিজেন পাঠাবে?
    আপনি কি জানেন এ রকম বিপদে পড়ে নবি ইউনুস আলাইহিস সালাম কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? তিনি কি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন? ভেঙে পড়েছিলেন? নিশ্চিত মৃত্যু জেনে হাত-পা গুটিয়ে বসে ছিলেন? তিনি কি আল্লাহকে বলেছেন, আল্লাহ, আমাকে তাে নবি হিশেবে পাঠিয়েছেন আপনি। আমি তাে আপনারই কাজ করি। তাহলে আমার ওপরে কেন এই বিপদ নেমে এলাে? কেন এত কঠিন শাস্তি আমার জন্য?
    নাহ। তার প্রতিক্রিয়া এ রকম ছিল না। মাছের পেটে বন্দি হওয়ার পরেও তিনি এক মুহূর্তের জন্য আল্লাহর ওপর থেকে ভরসা হারাননি। ভেঙে পড়েননি। আশা ছেড়ে দেননি। তিনি খুব সুন্দর পন্থায় আল্লাহর ওপর ভরসা করেছিলেন। মাছের পেটে বন্দি হওয়ার পরে তিনি যে দুআটি পড়েছিলেন, সেটাকে আল্লাহ তাআলা কুরআনে স্থান দিয়েছেন। সেই দুআ কমবেশি আমরা সকলেই জানি।
    لا إله إلا أنت سبحانك إني كنت من الظالمين
    লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনায-যালিমীন। বেশ অদ্ভুত রকম সুন্দর এই দুআটি! সাধারণত বিপদে পড়লে আমরা খুব ঘাবড়ে যাই, নার্ভাস হয়ে পড়ি। হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়, দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়ি। অথচ ইউনুস আলাইহিস সালামের বিপদের তুলনায় আমাদের বিপদ তাে কিছুই না। সমুদ্রের রাক্ষস মাছের পেটের ভেতরে চলে যাওয়ার মতন সংকট পৃথিবীতে আর কী হতে পারে? এমন অবস্থায় পতিত হয়েও আল্লাহর নবি ইউনুস আলাইহিস সালাম যে ধৈর্য আর ঈমানের প্রমাণ দিয়েছেন তা অবিশ্বাস্য!
    এ রকম ঘঘারতর বিপদের সময়েও তিনি একত্ববাদের আহ্বান ভুলে যাননি। তিনি বলেছেন, “লা ইলাহা ইল্লা আনতা’—আপনি ছাড়া কোনাে সত্য উপাস্য নেই।
    কঠিন বিপদ। চারদিকে ঘনকালাে অন্ধকার। কোথাও আলাের লেশমাত্র নেই। এমন অবস্থাতেও তিনি বললেন, ‘ওগাে মাবুদ! তুমি ছাড়া আর কোনাে উপাস্য নেই, যে আমাকে এই বিপদ থেকে বাঁচাতে পারে। কারও ক্ষমতা নেই আমাকে এখান থেকে বাঁচিয়ে নেওয়ার।
    দুআর মধ্যে এই কথাটা বলে শুরুতেই তিনি ঈমানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতিটাই প্রদান করেছেন। জগতের সকল অসত্য মাবুদ, অসত্য ইলাহর কাছ থেকে নিজেকে মুক্ত করে তিনি এক সত্য ইলাহ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন।
    এই ঘােষণার পরে তিনি বলেছেন, সুবহানাকা। অর্থাৎ আপনি পবিত্র।
    কী চমৎকার কথা! নিকষকালাে অন্ধকারের মধ্যে নিজের হাত নিজে দেখতে পাচ্ছেন না। মৃত্যু একেবারে সন্নিকটে। এমন অবস্থাতেও তিনি আল্লাহর গুণগান গেয়ে বলছেন, “হে আমার রব! আপনি তাে পবিত্র।
    কোনাে বিপদে পড়লে আমরা তাে ফরয সালাতটুকু পর্যন্ত কাযা করে ফেলি। আল্লাহর গুণগান গাওয়া তাে দূরের কথা। কিন্তু দেখুন, এমন ঘােরতর বিপদেও নবি ইউনুস আলাইহিস সালাম আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার প্রশংসা, তাঁর স্তুতি, তাঁর যিকির করতে ভােলেননি।
    এর পরের অংশে আল্লাহর নবি ইউনুস আলাইহিস সালাম বলেছেন, ইন্নি কুন্তু মিনায-যালিমীন। অর্থাৎ নিশ্চয় আমি ছিলাম জালিম।
    বিপদে পড়লে আমরা সাধারণত হাঁ-হুতাশ করি। বিলাপ করি আর বলি, কী এমন অপরাধ করেছি যে, আল্লাহ আমার সাথে এমনটা করছেন? কেন আমাকে এভাবে facuzal? Why always me? Why?’
    অথচ, আল্লাহর নবি ইউনুস আলাইহিস সালামের সে রকম কোনাে অভিযােগ, অনুযােগ বা আপত্তি ছিল না। তিনি অভিযােগের সুরে বলেননি, ‘ওগাে আল্লাহ। কেন আপনি আমাকে এ রকম কঠিন বিপদে নিপতিত করলেন? কী ছিল আমার অপরাধ?’ বরং তিনি বলেছেন, “হে আমার প্রতিপালক, আপনি হলেন পবিত্র! আর আমি হলাম জালিম। আমিই অন্যায় করেছি। সব দোষ আমার।'[1]
    তিনি দোষ স্বীকার করলেন। নিজের অন্যায় মাথা পেতে নিলেন। তবে তার আগে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলাকে সকল দোষ, সকল ত্রুটি আর সকল ভ্রান্তির ঊর্ধ্বে ঘােষণা করলেন। প্রতিউত্তরে আল্লাহ বললেন—
    فَاسْتَجَبْنَا لَهُ وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْغَمِّ وَكَذَلِكَ نُنجِي الْمُؤْمِنِينَ
    অতঃপর আমি তার সেই আহ্বানে সাড়া দিলাম এবং তাকে দুঃশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিলাম। এভাবেই আমি মুমিনদের রক্ষা করি2]
    বিপদে পড়লে আমাদের উচিত ধৈর্যধারণ করা। আল্লাহর প্রতি অভিযােগ না এনে নিজের ভুল স্বীকার করা। এরপর সর্বোত্তম উপায়ে আল্লাহর কাছে দুআ করা।
    কুরআনে নবি-রাসুলদের এ রকম আরও বেশ কিছু দুআ আছে যেখানে তাদের সর্বোচ্চ ধৈর্য, তাকওয়া আর ঈমানের প্রমাণ পাওয়া যায়। বিপদের সময় তারা কখনাে ভেঙে পড়তেন না। নিরাশ হতেন না। জীবনে বিপদ আপদের সম্মুখীন হলে আমাদেরও উচিত ভেঙে না পড়া। আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করা। বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করা। কেবল তাঁর কাছেই সাহায্য চাওয়া। বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ অবশ্যই আমাদের দুআ শােনেন এবং তিনি অবশ্যই আমাদের রক্ষা করবেন।
    [1] ধারণাটি শাইখ উমার সুলাইমানের In the darkest night লেকচার থেকে পাওয়া।
    [2]সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৮৮

  2. Sajjat alam

    বেলা ফুরাবার আগে
    আরিফ আজাদ সমগ্র
    আরিফ আজাদের বিখ্যাত লিখনিসমূহ
    #_মন_খারাপের_দিনে_পার্ঠ_২;-
    খুব মন খারাপ? হৃদয়ের অন্দরমহলে ভাঙনের জোয়ার? চারপাশের পৃথিবীটাকে বিস্বাদ আর বিরক্তিকর লাগছে? মনে হচ্ছে, আপন মানুষগুলাে দূরে সরে যাচ্ছে? হারিয়ে যাচ্ছে প্রিয়জন, প্রিয়মানুষ? কিংবা অযাচিত, অন্যায্য সমালােচনায় ক্ষতবিক্ষত অন্তর? নিন্দুকের নিন্দায় হৃদয়ের গভীরে গভীর দুঃখবােধের প্লাবন? তাহলে চলুন আমরা ঘুরে আসি অন্য একটা জগত থেকে।
    বলছিলাম সেই সময়কার কথা যখন পৃথিবীতে রাজত্ব করছিল সবচাইতে নিকৃষ্ট, নির্দয়, নরপিশাচ শাসক ফিরাউন। সম্ভবত, পৃথিবী আর কখনােই তার মতন দ্বিতীয় কোনে জালিম শাসককে অবলােকন করবে না। তার অত্যাচার আর নির্যাতনের মাত্রা ছিল অতি ভয়ংকর। হবেই-বা না কেন? নিজেকে সে ‘খােদা দাবি করত। খােদার শান মান আর মর্যাদার আসনে কল্পনা করে সে নিজেকে জগতের একচ্ছত্র অধিপতি ধরে নিত। তার এই মিথ্যে দাবির সাথে যারাই দ্বিমত করত, তাদের কপালে জুটত—মৃত্যু সেই মৃত্যুগুলাে কোনাে সাধারণ মৃত্যু ছিল না। কাউকে আগুনে পুড়িয়ে মারত, কাউকে পানিতে চুবিয়ে মারত। যেন মৃত্যুর বাহারি আয়ােজনে ভরপুর থাকত তার সংসদ।
    ফিরাউন ধরে ধরে বনি ইসরাইলের পুত্র সন্তানদের হত্যা করত। ফিরাউন জানত তাকে বধ করার জন্য এই বনি ইসরাইলের মধ্যেই সত্য ইলাহের একজন সত্য না প্রেরিত হবে। সে ভাবত, বনি ইসরাইলের ঘরে জন্ম নেওয়া সকল পুত্র সন্তান হত্যা করতে পারলেই তার পথের কাঁটা সাফ করে ফেলা যাবে।
    এই নিষ্ঠুর, নির্দয় জালিমের হাত থেকে নিজের সন্তানকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠল শিশু মুসার মায়ের অন্তর। চোখের সামনে প্রাণাধিক প্রিয় সন্তানের নির্মম মৃত্যুদৃশ্য। অবলােকন করা দুনিয়ার কোনাে বাবা-মায়ের পক্ষেই সম্ভব নয়। কীভাবে বাঁচাবেন পুত্রকে তিনি? কীভাবে তাকে আড়াল করবেন জালিম বাহিনীর নাগপাশ থেকে, অস্থির চঞলা হয়ে পড়লেন তিনি। মুসার মায়ের হৃদয়ের এই ব্যাকুলতা আল্লাহর কাছে গােপন থাকল না। তিনি শিশু মুসা আলাইহিস সালামকে একটা বাক্সে ভরে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার জন্য মুসার মাকে নির্দেশ দিলেন। ব্যাপারটা কুরআনে এসেছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলছেন—
    وَأَوْحَيْنَا إِلَى أُمِّ مُوسَى أَنْ أَرْضِعِيهِ فَإِذَا خِفْتِ عَلَيْهِ فَأَلْقِيهِ فِي الْيَمِّ
    আর আমি মুসার মায়ের নিকট এই মর্মে নির্দেশ পাঠালাম যে, তুমি তাকে দুধ পান করাও। অতঃপর যখন তুমি তার ব্যাপারে আশঙ্কা করবে তখন তাকে নদীতে নিক্ষেপ করবে।[1]
    [1] সুরা কাসাস, আয়াত : ০৭
    চিন্তা করুন। একদিকে ফিরাউন বাহিনীর হাত থেকে সন্তানকে প্রাণে বাঁচাতে মায়ের অন্তর মরিয়া। অন্যদিকে বলা হচ্ছে, শিশুটাকে যেন বাক্সবন্দি করে নদীর পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। আপাতদৃষ্টিতে আমাদের মনে হতে পারে, এ যেন মৃত্যুর আগেই মৃত্যুকে বরণ করে নেওয়া। ডাঙার বাঘের ভয়ে জলের কুমিরের সামনে সন্তানকে ঠেলে দেওয়ার মতন ব্যাপার। আমার এবং আপনার মনে যে ভাবনার উদয় হচ্ছে তা কি মুসা আলাইহিস সালামের মায়ের মনেও উদয় হয়নি? হ্যাঁ, হয়েছে তবে, তার মনের সেই ভীতি, সেই ভয়, সেই সন্দেহ তখনই দূর হয়ে গেল, যখন তিনি আল্লাহর কাছ থেকে আশার বাণী শুনতে পেলেন। সুমহান আল্লাহ বললেন—
    ولَا تَخَافِي وَلَا تَحْزَنِي إِنَّا رَادُّوهُ إِلَيْكِ وَجَاعِلُوهُ مِنَ الْمُرْسَلِينَ
    আর একদম ভয় করবে না এবং চিন্তাও করবে না। নিশ্চয়ই আমি তােমার। সন্তানকে তােমার নিকট ফিরিয়ে দেবাে এবং তাকে রাসুলদের অন্তর্ভুক্ত করব [২]
    [2]সুরা কাসাস, আয়াত : ০৭
    ওই জায়গায় আমি কিংবা আপনি হলে যে ভয় এবং যে ভীতি আমাদের অন্তরকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরত, একই ভয় মুসা আলাইহিস সালামের মায়ের মনেও জেঁকে বসেছিল। তবে তিনি হতােদ্যম হয়ে যাননি। আশা ছেড়ে দেননি। তিনি চোখমুখ বন্ধ করে এমন এক সত্তার ওপর ভরসা করেছিলেন যার দেওয়া আশা কখনাে মিথ্যে হয় না। যিনি কখনােই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না। এরপর ফলাফল কী হলাে তা আমরা সকলেই জানি। মুসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা রক্ষা করেছিলেন। কেবল রক্ষাই করেননি, যে শত্রু হন্যে হয়ে তাকে হত্যা করার জন্য ওঁৎ পেতে বসে ছিল, সেই শত্রুর অন্দরমহলেই শিশু মুসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তাআলা বড় করে তুলেছিলেন। এই পরিকল্পনা কার? কে এমন নিখুঁত পরিকল্পনা করার ক্ষমতা রাখেন? তিনি সুমহান আল্লাহ।
    وَمَكَرُواْ وَمَكَرَ اللّهُ وَاللّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ
    তারা চক্রান্ত করে আর আল্লাহ কৌশল করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী [1]
    [1] সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৫৪
    আমরা ইয়াকুব আলাইহিস সালামের ঘটনাও স্মরণ করতে পারি। শিশু ইউসুফ ছিলেন পিতা ইয়াকুব আলাইহিস সালামের সবচেয়ে প্রিয় সন্তান। ইউসুফের প্রতি পিতা ইয়াকুব আলাইহিস সালামের এই অবর্ণনীয় ভালােবাসাকে কোনােভাবে মেনে নিতে পারেনি তার অন্য সহােদরেরা। হিংসার বশবর্তী হয়ে, খেলার নাম করে তারা ছােট্ট ইউসুফকে ফেলে দেয় এক অন্ধকার কূপের মধ্যে।
    পিতা ইয়াকুব আলাইহিস সালামের কাছে এসে তারা খুব সুন্দর কাহিনি ফেঁদে বসল। বলল, “বাবা, খেলার মাঠ থেকে ইউসুফকে বাঘ খেয়ে ফেলেছে!’ ইয়াকুব আলাইহিস সালাম জানতেন, তার ছেলেরা তার কাছে এসে মিথ্যে কথা বলছে। তিনি এটাও জানতেন, তারা নিশ্চিত ইউসুফের কোনাে ক্ষতি করে বসেছে। এতৎসত্ত্বেও তিনি কোনাে প্রতিশােধ গ্রহণ করলেন না। প্রাণাধিক প্রিয় সন্তানকে হারানাের বেদনায় মাথা চাপড়িয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলেন না। এমনকি ছেলেদের তিনি কোনাে কটু কথা, কোনাে হুমকি-ধমকি পর্যন্তও দিলেন না। তিনি কী বলেছিলেন জানেন? কুরআনে এসেছে –
    فَصَبْرٌ جَمِيلٌ وَاللّهُ الْمُسْتَعَانُ عَلَى مَا تَصِفُونَ
    সুতরাং, আমার করণীয় হচ্ছে সুন্দর এবং সুস্থিরভাবে ধৈর্যধারণ করা। আর তােমরা আমার কাছে যা বর্ণনা করছ, সে বিষয়ে আল্লাহই হলেন আমার একমাত্র সাহায্যদাতা [1]
    [1] সুরা ইউসুফ, আয়াত : ১৮
    আল্লাহর ওপর ভরসার পারদ কতটা উঁচুতে থাকলে এমন মুহূর্তে একজন বাবা এ রকম কথা বলতে পারে? এভাবে ধৈর্যের চরম পরীক্ষা দিতে পারে? আর সেই ধৈর্যের বিনিময় কতটা বিশাল ছিল তা তাে আমরা জানি। ইউসুফ আলাইহিস সালামকে পরবর্তীকালে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা মিশরে অধিষ্ঠিত করেন রাজার বিশ্বস্ত লােক হিশেবে। যে ভাইগুলাে তার সাথে শত্রুতা করে একদিন তাকে কূপে ফেলে। দিয়েছিল, তাদেরকেই তিনি তার পায়ের কাছে এনে ফেলেছিলেন। তিনি ইয়াকুব আলাইহিস সালামের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন প্রিয়তম পুত্র ইউসুফকে, আর ইউসুফ আলাইহিস সালামের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন প্রিয়তম পিতাকে। সুবহানাল্লাহ! কত সুন্দর আল্লাহর জুড়ে দেওয়া মেলবন্ধন! কত চমৎকারই-না বিপদে ধৈর্যধারণের ফল!
    সুতরাং, দুনিয়াবি কষ্টগুলােতে, না পাওয়া’ ও ‘হারিয়ে ফেলা গুলােতে একজন মুমিন কখনােই হতাশ হবে না। চরম বিপদের মুহূর্তে, উভয় সংকটের সময়ে মুসা আলাইহিস সালামের মাতা আল্লাহর দেওয়া ফয়সালাই মাথা পেতে গ্রহণ করেছিলেন এবং অপেক্ষা করেছিলেন আল্লাহর কৃত ওয়াদার ফললাভের জন্য। পুত্র হারানাের শােকের দিনেও নবি ইয়াকুব আলাইহিস সালাম দেখিয়েছেন ধৈর্যের চরম পরাকাষ্ঠা আল্লাহ তাদের কাউকেই হতাশ করেননি। আন্তরিক সবর এবং আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল তথা ভরসা করার জন্য আল্লাহ তাদের উত্তম বিনিময় প্রদান করেছেন। মুসা আলাইহিস সালামের মাতার যিনি রব, তিনি আপনারও রব। যিনি ইয়াকুব আলাইহিস সালামের প্রতিপালক, তিনি আপনারও প্রতিপালক। মুসার মাতা যার ওপরে ভরসা করেছিলেন, আপনিও তাঁর ওপরে ভরসা করুন। ইয়াকুব আলাইহিস সালামের ভরসার কেন্দ্রবিন্দু যেখানে, আপনিও ঠিক সেই জায়গায় আপনার সমস্ত আশা আর ভরসাকে সমর্পণ করুন। যিনি মুসার মাতার অন্তরকে প্রশান্ত করতে পারেন, তিনি কি আপনার ভেঙে খানখান হয়ে যাওয়া হৃদয়ে প্রশান্তির ফল্পধারা বইয়ে দিতে পারেন না? যিনি মুসা আলাইহিস সালামকে তার চরম শত্রুর ঘরের মধ্যে বড় করে তুলতে পারেন, তিনি কি চাইলে আপনার দুঃখ, আপনার ব্যথা উপশম করে দিতে।
    পারেন না? যে মহান রব মুসার মাতার আর ইয়াকুব আলাইহিস সালামের ভরসার প্রতীক হয়েছিলেন, আস্থার প্রতীক হয়েছিলেন, সেই রবকে আপনিও আপনার সকল আশাভরসার প্রতীক বানিয়ে ফেলুন। জীবনের সমস্ত দুর্যোগে কেবল তাঁর ওপরই ভরসা করুন। দেখবেন আপনার জীবন এক অন্য রকম প্রশান্তিতে ভরে গেছে।
    মানুষ হিশেবে আপনার অবশ্যই জানা উচিত—এই দুনিয়া আপনার জন্য কখনােই নির্মল আর নিঝঞ্জাট হবে না। জীবনের একটা পরম বাস্তবতা হলাে জীবন কখনােই রেল লাইনের মতাে সমান্তরাল হয় না। এই জীবন হলাে দুঃখ-ক্লেশ-কষ্ট দিয়ে গড়া। দুনিয়ার সবাইকে আপনি কখনােই আপনার বন্ধু হিশেবে পাবেন না। সবচাইতে পবিত্র, সবচাইতে তাকওয়াবান ব্যক্তি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তার চারপাশের সবাইকে কখনােই বন্ধু হিশেবে পাননি। তিনি ছিলেন ‘আল-আমিন তথা বিশ্বস্ত। সবার কাছে ন্যায় এবং আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠা লােকটিরও সমালােচক ছিল। নিন্দুক ছিল। কুৎসা-রটনাকারী ছিল। মানুষের সমালােচনার তির নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও বিদ্ধ করতে ছাড়েনি। নবিজি যখন সমালােচকদের দ্বারা ক্ষতবিক্ষত, যখন তার হৃদয় ভারী হয়ে উঠেছিল মানুষের কটু কথা আর কটু বাক্যে, তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বললেন—
    فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُن مِّنَ السَّاجِدِينَ ✡لَقَدْ نَعْلَمُ أَنَّكَ يَضِيقُ صَدْرُكَ بِمَا يَقُولُونَ
    আর আমি তাে জানি তারা যা বলে তাতে আপনার অন্তর ক্ষতবিক্ষত হয়। সুতরাং, আপনি আপনার রবের প্রশংসায় তাসবিহ পাঠ করুন আর অন্তর্ভুক্ত হােন সিজদাকারীদের।[1]
    [1] সুরা হিজর, আয়াত : ৯৭-৯৮
    সৃয়ং নবিজিকে যেখানে সমালােচনার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে, সেখানে আপনি বা আমি কীভাবে ধরে নিতে পারি যে, আমাদের সমালােচক থাকবে না? নিন্দুক থাকবে না? আমাদের পেছনে কুৎসা-রটনাকারী থাকবে না? বস্তুত এটাই হলাে জীবন! এর জবাবে আমাদের প্রতিউত্তর কী হবে? আল্লাহ শিখিয়ে দিচ্ছেন, তাসবিহ পাঠ এবং সালাত আদায়। এতেই রয়েছে ক্ষতবিক্ষত অন্তরের দুঃখ সারানাের উপশম। ভগ্নহৃদয় পুনর্নির্মাণের মহৌষধ। নবিজিও আল্লাহর বাতলে দেওয়া উপায়েই হৃদয়কে প্রশান্ত করেছেন। মানুষের অযাচিত সমালােচনায় যখন তার হৃদয় বেদনার। ভারে নুইয়ে পড়ত, তখন তিনি বিলাল রাযিয়াল্লাহু আনহুকে সালাতের জন্য ডাকতে আর বলতেন, ‘বিলাল, সালাতের মাধ্যমে আমাদের অন্তরকে প্রশান্ত করাে। [১]
    [1] সুনানু আবি দাউদ : ৪৯৮৫, হাদিসটি সহিহ
    যখন কেউ আপনার নামে কুৎসা রটাবে, অনর্থক আপনার নামে সমালােচনা করবে, তখন আপনি ধৈর্যহারা হবেন না। হতবিহ্বল হয়ে পড়বেন না। সবর করবেন। এই সবরের ফল সুমিষ্ট। আয়িশা রাযিয়াল্লাহু আনহার ব্যাপারে দেওয়া মুনাফিকদের অপবাদের কথা কি মনে আছে? একবার এক সফরের সময়ে তিনি কাফেলা থেকে একটু পিছিয়ে পড়েন। তিনি যে কাফেলা থেকে ছিটকে পড়েছেন সেটা কেউ বুঝতে পারেনি। এরপর, জনশূন্য সেই প্রান্তরে তিনি ঠিক কী করবেন এমন ভাবনার দোলাচলে সময় যেতে লাগল। একসময় তিনি সেখানটায় ঘুমিয়ে পড়েন। পরে, সাফওয়ান ইবনু সুলামি ওই পথ অতিক্রম করার সময় আয়িশা রাযিয়াল্লাহু আনহাকে দেখতে পান এবং তাকে সাথে নিয়ে পুনরায় কাফেলায় যােগ দেন।
    এই ঘটনাকে নিয়ে কুৎসা রটিয়ে বেড়ায় মুনাফিকদের সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই। সে প্রশ্ন তােলে আয়িশা রাযিয়াল্লাহু আনহার পবিত্র চরিত্র নিয়ে! শুনতে অবাক লাগলেও সত্য, মুনাফিকদের এই কুৎসা, এই সমালােচনা এবং তিরস্কার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং আয়িশা রাযিয়াল্লাহু আনহার মাঝে সাময়িক দূরত্বের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। নবিজি বুঝতে পারছিলেন না, সমালােচকদের তিনি কী জবাব দেবেন। কীভাবেই-বা প্রমাণ করবেন যে, আয়িশা একজন সতীসাধ্বী নারী! তাছাড়া, আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই যা প্রচার করে বেড়াচ্ছে, তার সত্য-মিথ্যার ব্যাপারেও তিনি সন্দিহান। তিনি কেবল আল্লাহর ওপর ভরসা করলেন। এমন দোটানা পরিস্থিতি, এমন বিপন্ন সময়ে তিনি এক মহামহিম আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করেছেন। আয়িশা রাযিয়াল্লাহু আনহাও তা-ই করলেন। কারও সাথে কোনাে বিরােধ করেননি। কোথাও উচ্চবাচ্য করেননি। চোখের জল ফেলে কেবল আল্লাহর কাছে নিজের সমস্ত অভিযােগ, সমস্ত বাসনা সােপর্দ করেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিংবা আয়িশা রাযিয়াল্লাহু আনহাকে নিরাশ করেছেন? হতাশ করেছেন? মুনাফিকদের বিরুদ্ধে, সমালােচনাকারীদের বিরুদ্ধে, কুৎসা-রটনাকারীদের বিরুদ্ধে সাহায্য করেননি? অবশ্যই করেছেন। ওহি নাযিল।
    করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আয়িশা রাযিয়াল্লাহু আনহার চরিত্রের ব্যাপারে মুনাফিকদের সকল ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন। কুরআনে আল্লাহ বলছেন—
    إِنَّ الَّذِينَ جَاؤُوا بِالْإِفْكِ عُصْبَةٌ مِّنكُمْ
    নিশ্চয় যারা এই অপবাদ রটনা করেছে, তারা তােমাদেরই একটি দল। [1]
    [1] সুরা নুর, আয়াত : ১১
    এটা যে একটি অপবাদ, কুৎসা এবং জিঘাংসা, সেটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন। এভাবেই তাে আল্লাহ তার মুমিন ব্যক্তিদের সাহায্য করে থাকেন। কখনাে স্পষ্ট সাহায্য, আবার কখনাে-বা অস্পষ্ট সাহায্য।
    জীবনে আপনিও আপনার চারপাশে একটি দল পাবেন যারা সর্বদা আপনার সমালােচনায় মুখর থাকবে। গভীর পর্যবেক্ষণের দ্বারা আপনার ভালাে কাজটির খুত বের করবে। আপনার ত্রুটিযুক্ত কাজটিকে ফলাও করে প্রচার করে বেড়াবে যাতে আপনাকে মানসিকভাবে ভেঙে দেওয়া যায়। যাতে আপনি হতাশ হয়ে পড়েন। আপনার মন যাতে বিষিয়ে ওঠে। এ সবকিছুই তারা আপনার প্রতি হিংসা, ঈর্ষা আর জিঘাংসার বশবর্তী হয়ে করে থাকে; কারণ, আপনার অবস্থান তাদের পীড়া দেয়। আপনার গ্রহণযােগ্যতা তাদের মনে বিষাক্ত ফলার মতাে আঘাত করে। আপনাকে আপনার অবস্থান থেকে নামিয়ে আনার চিন্তায় তারা সদা বিভাের থাকে—কীভাবে অন্যদের চোখে আপনাকে খাটো করা যায়, কীভাবে অন্যদের মনে আপনার ব্যাপারে সন্দেহের বীজ বুনে দেওয়া যায়।
    এদের ব্যাপারে কখনােই হতাশ হবেন না। এদের কথায় মন খারাপ করবেন না। ভেঙে পড়বেন না। হতােদ্যম হবেন না। এদের কথা কিংবা বক্তব্যের বিপরীতে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না। শুধু সবর করবেন। আল্লাহর ওপর ভরসা করে তাদের ক্ষমা করে দেবেন। নিজের এবং তাদের হিদায়াতের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবেন। ব্যস! আপনার কাজ কেবল এতটুকুই। এ রকম অবান্তর সমালােচনায় পতিত হলে নিজের সাথে কথা বলুন। ভেবে দেখুন তাে, আপনার ইখলাস আর নিয়ত আপনার কাছে পরিশুদ্ধ মনে হয় কি না? যদি অন্তরের ভেতর থেকে এই কথা প্রতিধ্বনিত হয় যে, আমি তাে এই কাজ আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্যই করেছি, তাহলে নিশ্চিন্ত মনে আপনার পরবর্তী কাজে মনােযােগ দিন। এ রকম বিশুদ্ধ নিয়তের কারণে ভুল কাজটার জন্যও আপনার আমলনামায় হয়তাে সাওয়াব যােগ হয়ে গেছে।
    মন খারাপের দিনগুলােতে আল্লাহর সাথে বেশি বেশি কথা বলুন—কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে, সালাতের সিজদার মধ্যে। আল্লাহকে বলুন তিনি যেন আপনার অশান্ত মনটাকে প্রশান্ত করে দেন। তাঁকে অনুনয়-বিনয় করে বলুন, বুকের মধ্যে যে কালবৈশাখী ঝড় আপনার মনের উঠোনটাকে তছনছ করে দিচ্ছে, সেই কালবৈশাখী তিনি যেন থামিয়ে দেন। সেখানে যেন রহমতের বারিধারা প্লাবিত হয় একটিবার নিজের জীবনে কুরআনকে জায়গা করে দিন। দেখবেন, জীবনের গতিপথ কীভাবে পাল্টে যায়। কুরআনের সারনির্যাসকে একবার নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করেই দেখুন না। দেখবেন আপনার জীবনটা অন্য রকম এক শীতলতায় ভরে উঠেছে। দুনিয়ার মানুষ যে অন্তর ভেঙে দেয়, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সেই অন্তর ভালােবাসার প্রলেপে জোড়া লাগিয়ে দেন।
    আপনার মনে হচ্ছে, আপনি ব্যর্থ হয়ে গেছেন, তাই না? মনে হচ্ছে, পৃথিবীটা আপনার জন্য সংকীর্ণ হয়ে গেছে। জীবনের কোনাে মানে খুঁজে না পেয়ে হতাশায় নিমজ্জিত আপনার তনুমন, এই তাে? কুরআন খুলুন। দেখুন আপনার রব আপনার জন্যই বলছেন—
    قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ
    অবশ্যই বিশ্বাসীরা সফল হয়েছে।[1]
    [1] সুরা মুমিনুন, আয়াত : ০১
    আপনি একজন মুমিন। একজন বিশ্বাসী। একজন তাকওয়াবান। আপনি তাে হতাশ হতে পারেন না। আল্লাহর দয়া থেকে, তাঁর করুণা, ভালােবাসা এবং রহমতের যে বারিধারা আপনার ওপর বর্ষিত হচ্ছে, তা থেকে আপনি কীভাবে নিরাশ হবেন? দুনিয়াবি ব্যর্থতা, অসফলতায় আপনার কী আসে যায়, বলুন? আল্লাহর ওপর যারা ভরসা করে, নির্ভর করে, তারা হতাশ হয় না। দুনিয়ার ব্যর্থতা তাদের আঘাত দেয় । তারা বরং অপেক্ষার প্রহর গােনে মহাসাফল্যের। সেই সাফল্যের, যার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন স্বয়ং রাব্বল আলামিন। আপনার হৃদয় যখন আল্লাহর ওপর ভরসায়। | টইটম্বর, তখন সিজদায় যাকারিয়া আলাইহিস সালামের মতাে করে বলুন-
    وَلَمْ أَكُن بِدُعَائِكَ رَبِّ شَقِيًّا
    হে আমার রব! আমি তাে কখনাে তােমাকে ডেকে ব্যর্থ হইনি।[1]
    [1]সুরা মারইয়াম, আয়াত : ০৪
    আপনার জীবনে অনেক দুঃখ আসতে পারে। আপনি মুখােমুখি হতে পারেন নানান ঝঞাক্ষু ঝড়ের। কোনাে কোনাে ঝড়াে হাওয়া এসে আপনার জীবনটাকে এলােমেলাে করে দিয়ে যাবে। অস্ফুট স্বরে মহান রবকে যখন বলেন, ‘মালিক! আমার জীবনে এত কষ্ট কেন?’ তিনি তখন বলেন—
    إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا
    নিশ্চয় কষ্টের সাথেই রয়েছে স্বস্তি।[2]
    [২]সুরা ইনশিরাহ, আয়াত : ০৬
    এমন কঠিনতর বিপদে আশেপাশে কাউকে পাচ্ছেন না। এমনকি অন্ধকারে আপন ছায়াটাও মিলিয়ে যায়। আপনার এতদিনের সুহৃদ, প্রিয় বন্ধু, প্রিয় স্বজনদের কেউই এই দুর্দিনে আপনার পাশে নেই। নিজেকে খুব একা মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে, অকুল দরিয়ায় একটি ডুবুডুবু নৌকার আপনি একাই যাত্রী। এই নৌকা যেকোনাে মুহূর্তেই তলিয়ে যাবে। এমন সময়ে আপনি যখন আশাহত হয়ে রবের কাছে ফরিয়াদ করে বলেন, ‘মাবুদ! আজকে আমাকে সাহায্য করার মতন কেউই নেই। তখন আপনার রব বলেন—
    وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِينَ
    মুমিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব।[৩]
    [3]সুরা রুম, আয়াত : ৪৭
    প্রিয়জনেরা বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দূরে চলে গেছে। জীবন নামক চোরাবালির সাথে আপনি আর কোনােভাবেই পেরে উঠছেন না। খুব অসহায়বােধ করছেন। মনে হচ্ছে, আপনি এক্ষুনি ডুবে যাবেন দুঃখের অতল গহ্বরে। হারিয়ে যাবেন চিরতরে। তখন যদি মুখ ফুটে বলেন, আল্লাহ! আমার পাশে আজ কেউই আর অবশিষ্ট নেই। তখন আপনার ডাক শুনে আল্লাহ বলেন—
    قَالَ لَا تَخَافَا إِنَّنِي مَعَكُمَا أَسْمَعُ وَأَرَى
    ভয় পেয়াে না! আমি তােমাদের সাথেই আছি। আমি সব শুনি এবং দেখি [১]
    [1]সুরা ত-হা, আয়াত : ৪৬
    পাপে জর্জরিত হয়ে আছে জীবন। চোখ মেললেই চারদিকে কেবল অন্ধকারের ঘনঘটা দেখতে পান। কলুষিত হৃদয় নিয়ে যখনই আল্লাহর দরবারে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমি যে এত পাপ করেছি, আল্লাহ কি সত্যিই আমাকে ক্ষমা করবেন?’ তখনই আপনার রব জবাব দেন—
    إِنَّ اللّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ
    নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালােবাসেন।[2]
    [২]সুরা বাকারা, আয়াত : ২২২
    এভাবেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা প্রতিটি সময়ে, প্রতিটি মুহূর্তে আপনার পাশে থাকেন। আল্লাহর কালামকে, তাঁর বাণীকে জীবনে ধারণ করুন। আল্লাহকে জীবনে বন্ধু বানিয়ে নিন। বিশ্বাস করুন, বন্ধু হিশেবে তাঁর চেয়ে উত্তম, তাঁর চেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল, তাঁর চেয়ে মহান আর কেউ হতেই পারে না। নিজের জীবনের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে আলাের রেখা প্রবেশ করতে দিন। অন্ধকারকে আলাে দ্বারা দূরীভূত করুন। আপনার যে পৃথিবী এতদিন এক ঘনঘাের আঁধারে নিমজ্জিত ছিল তা উদ্ভাসিত হবে সম্পূর্ণ নতুন এক রূপে। নতুন এক রঙে। মন খারাপের দিনগুলােতে আল্লাহকে আপনার সঙ্গী বানান, দেখবেন সে মুহূর্তগুলাে সব আচমকা আপনার জীবনের সেরা মুহূর্তে পরিণত হয়ে গেছে। তাই যে দুঃখগুলাের কথা কাউকে বলতে পারছেন না, যে দুশ্চিন্তার অনলে আপনি দগ্ধ হচ্ছেন প্রতিদিন, যে ভয় আপনাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে অহরহ, হারানাের যে বেদনা আপনাকে কুরে কুরে। খাচ্ছে, যে অস্থিরতা আপনাকে ঘুমােতে দিচ্ছে না, যে ভগ্নহৃদয় আপনাকে ভেঙে খানখান করে দিচ্ছে, সে সমস্ত মন খারাপের গল্পে কেবল বলুন, “হাসবুনাল্লাহু ওয় নিমাল ওয়াকিল। আমার জন্য আমার আল্লাহই যথেষ্ট। বিশ্বাস করুন, আপনা সমস্ত মনখারাপের উপশমের জন্য কেবল এটুকুই যথেষ্ট। আল্লাহ যার অভিভাবক কপালে তার দুশ্চিন্তার ভাঁজ থাকতেই পারে না।

Add a review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button